হাওর অঞ্চলে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ করার কথা ছিল গত ২৭ এপ্রিল থেকে। সেই অনুযায়ী সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণাসহ বিভিন্ন এলাকায় ধান কেনা শুরু হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত হবিগঞ্জে সরকারিভাবে ধান কেনা তো দূরের কথা, কোন সিদ্ধান্তই নিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ধান কাটার শেষ পর্যায়ে এসে বিক্রি করতে না পেরে হতাশায় কৃষকরা। শ্রমিকের মজুরি দিতে বাধ্য হয়ে উৎপাদন মূল্যের চেয়েও কম দামে আড়তে ধান বিক্রি করছেন অনেক কৃষক।
জানা যায়, এ বছর হবিগঞ্জ জেলায় ৪ লাখ ৭০ হাজার টন বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার আশা করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে জেলায় ৮০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। কৃষক এখন ধান বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন। সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু না হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে চিকন ধান ৭০০ টাকা মণ এবং মোটা ধান ৫০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে । যেখানে উৎপাদন খরচও উঠছে না বলে দাবি কৃষকের।
এদিকে, সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, আসন্ন বোরো মৌসুমে হবিগঞ্জ জেলা থেকে ১৫ হাজার ৮০১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবে সরকার। এছাড়া কোন উপজেলা থেকে কত মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবে সেটিও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কেউই কোন সঠিক জবাব দিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলার কৃষক সঈদ হোসেন বলেন, এলাকায় শ্রমিক না থাকার কারণে বাহিরের শ্রমিক এনে ধান কাটিয়েছি। এখন শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করার জন্য ধান বিক্রি করতে হবে। কিন্তু সরকারও ধান নিচ্ছে না, আর পাইকাররা যে দামে ধান নিচ্ছেন তাতে উৎপাদন খরচও উঠে না।
একই কথা জানালেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কৃষক মোতালিব মিয়া। তিনি বলেন- ‘প্রতি বছরই শুনি সরকার এক হাজার টাকা মণ দামে ধান কিনবে। মেম্বার (ইউপি সদস্য) আমাদের কৃষি কার্ডও নেয়। কিন্তু ধান আর সরকার কিনে না। ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা মণে আড়তে ধান বিক্রি করতে হয়। এতে ধানের উৎপাদন মূল্য পাওয়া যায় না।’
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. তমিজ উদ্দিন খান বলেন, ইতোমধ্যে জেলায় ৮০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া আবহাওয়ার ভালো থাকায় এবার কৃষকরা ভালোভাবেই ধান তুলতে পারবেন বলে আমরা আশা করছি।
তিনি বলেন, সরকারিভাবে ধান কেনার বিষয়ে আলাদা কমিটি রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন খন্দকার বলেন, ধান কাটা শেষ হয়নি। যারা ২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন তারাই ধান কাটা শেষ করেছেন। কিন্তু আমাদের এলাকায় ২৯ জাতের ধান এখনও মাঠে রয়েছে। তাই এখনও সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি। আগামী ২ মে পর্যন্ত তালিকা তৈরি হবে। এরপর আমরা ধান কেনা শুরু করব।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, এখনও কৃষকের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। কিছু দিনের মধ্যেই ধান কেনা শুরু হবে।
তবে জেলা থেকে এবং একজন কৃষকের কাছ থেকে কি পরিমাণ ধান কেনা হবে তার সঠিক উত্তর দিতে পারেননি তিনি।