বাজারে সাধারণত দেখা মেলে সবুজ বা গাঢ়ো সবুজ বর্ণের তরমুজ। কিন্তু ব্যতিক্রমী সোনালি বর্ণের বিদেশি গোল্ডেন ক্রাউন, বা ‘মাল্টা তরমুজ’ চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কৃষক খলিল উদ্দীন।
গ্রীষ্মকালীন সবজির পাশাপাশি স্বল্প পরিমাণ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ তরমুজ চাষ শুরু করেন। এক দিকে যেমন সফলতা পেয়েছেন, অন্যদিকে লাভবান হয়েছেন তিনি। খলিলের এই নতুন জাতের তরমুজ চাষে সফলতা দেখে উপজেলার অনেকেই এই চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গোল্ডেন ক্রাউন বা মাল্টা তরমুজ অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি সুস্বাদু ফল। সাধারণত উঁচু জমি এবং দোআঁশ মাটি এই তরমুজ চাষের জন্য উপযুক্ত। সাধারণত তরমুজ মাটিতে হলেও এটি মাচায় বড় হয়। বীজ বপনের ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ফুল আসে এবং ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মাথায় ফল কাটা শুরু হয়। এ তরমুজের আদি নিবাস তাইওয়ান। নতুন জাতের তরমুজটি উপজেলায় প্রথমবারের মতো চাষ শুরু হলেও বাজারে ভাল দামের পাশাপাশি চাহিদাও রয়েছে বেশ।
খলিল যশোরের মণিরামপুর পৌর এলাকার তাহেরপুর গ্রামের সৈয়দ আহম্মেদের ছেলে। শনিবার (২ মে) সকালে তার গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজের ক্ষেতে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, সবুজ গাছের বোটাই বোটাই বাঁশ আর প্লাস্টিকের জালের সুতায় তৈরি মাচায় ঝুলছে সোনালী রঙের গোল্ডেন ক্রাউন বা ‘মাল্টা তরমুজ’। ফলন ভাল হওয়ায় খলিলের চোখ মুখে আনন্দের ছোঁয়া ফুটে উঠেছে।
বার্তা২৪.কমকে খলিল জানান, সবসময় তিনি বাজারে চাহিদা সম্পন্ন নতুন জাতের ফসল ও সবজি চাষ করেন। নতুন জাতের ফল ও সবজি চাষ করেন বলেই উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বরাবরই সহযোগিতা পেয়ে থাকেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা জেলার তার এক আত্মীয় বাড়ি থেকে গোল্ডেন ক্রাউন বা মাল্টা তরমুজের বীজ নিয়ে আসেন তিনি। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে শীতকালীন ফসল শেষ হওয়ার পরে সেই জমিতে পরীক্ষামূলক দুই বিঘা জমিতে বীজ বপন করে। বীজ বপনের পর গাছ ৬টি লম্বা হলে বাঁশের চটা দিয়ে মাচা দেয়া হয়। বপনের ২৫ থেকে ৩০ দিন পর ফুল আসে এবং দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ফল কাটা শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, বাজারে ভাল দামের পাশাপাশি চাহিদাও রয়েছে বেশ। সপ্তাহ খানেক পরই তরমুজ বাজারে উঠবে। বাজারে বর্তমানে এই তরমুজের প্রতিটির দাম ৮০ থেকে ১শ’ টাকা পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। এই তরমুজ চাষে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হলেও তিনি ৫০ হাজার টাকা লাভবান হবেন বলে আশাবাদী।
এছাড়া এ তরমুজ যশোরের বাইরের জেলাগুলোতে পাঠাতে পারলে দিগুণ দাম পেতেন। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে ঘোষিত লকডাউনের কারণে বাইরের জেলায় পাঠাতে পারছেন না তিনি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভাল বাজার দর পেয়ে লাভের আশা দেখছেন তিনি।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার হীরক কুমার সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, নতুন জাতের এই তরমুজ চাষে কৃষক খলিলকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে কৃষি বিভাগ। এই সোনালী রঙের গোল্ডেন ক্রাউন বা ‘মাল্টা তরমুজ’ চাষ ছড়িয়ে দিতে উপজেলায় বিভিন্ন চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ।