ঢাকায় নিখোঁজ হওয়ার পর উদ্ধার হওয়া ফটোসাংবাদিক ও দৈনিক পক্ষকাল পত্রিকার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজলকে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় জামিন দিলেও ৫৪ ধারার নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পাসপোর্ট আইনের মামলা ও ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে রোববার (৩ মে) বিকেলে তাকে যশোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলামের আদালতে আনা হয়। পরে বিচারক শুনানি শেষে ৫৪ ধারার নতুন মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কারাগারে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে জানিয়েছেন কাজলের আইনজীবী সুদীপ্ত ঘোষ।
এর আগে তাকে পোর্ট থানা পুলিশ হ্যান্ডকাপ পরিয়ে বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে যশোরে নিয়ে আসে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আসামি কাজলের হাতে হ্যান্ডকাপ পরানোয় আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এর আগে ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে বেনাপোল পোর্ট থানায় ১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট আদেশ আইনের ১১(৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। গত ১০ মার্চ তিনি ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন। পরিবারের দাবি, তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
এ মামলার বাদী ৪৯ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বেনাপোলের রঘুনাথপুর বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার মো. আশেক আলী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, শনিবার (৩ মে) দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে বিজিবি ফোর্স রঘুনাথপুর এলাকায় নিয়মিত টহলে ছিল। রাত পৌনে ১টার দিকে রঘুনাথপুর গ্রামের মেইন পিলার থেকে একশ’ গজ অভ্যন্তরে শফিকুল ইসলাম কাজল পায়ে হেঁটে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার সময় বিজিবি টহল দল আটক করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নিজেকে বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয় দেন। তার নাম ঠিকানা ও সাংবাদিক পরিচয় দেন। অবৈধভাবে বিনা পাসপোর্টে ভারতীয় দালালের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছিল বলে স্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে বেনাপোল পোর্ট থানায় ১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট আদেশ আইনের ১১(৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার নম্বর ৫। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে তাকে গভীর রাতে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি।
রোববার (৩ মে) বিকালে বেনাপোল থেকে এনে তাকে যশোর ডিএসবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পরপরই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের মামলা ছাড়াও ঢাকায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিকেল ৩টার দিকে যশোর ডিএসবি কার্যালয় থেকে আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয় ফটোসাংবাদিক ও দৈনিক পক্ষকালের সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজলকে। এসময় তিনি মানসিকভাবে দৃঢ় ছিলেন। আদালত প্রাঙ্গণে তার ছেলে মনোরম পলক তাকে জড়িয়ে ধরেন। এসময় কাজলের চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। শফিকুল ইসলাম কাজল তার ছেলেকে বলেন, ‘ভয় পাসনে, আমি কোনো অন্যায় করিনি। সত্যের জয় হবেই।’
আদালত সূত্র জানায়, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের অভিযোগে ১১(সি) ধারায় আটক দেখিয়ে যশোরের শার্শা আমলি আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকে ৫৪ ধারায়ও আটক দেখানো হয়েছে। যশোরের আমলি আদালতের (শার্শা) বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলাম সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে বিজিবির দায়ের করা অবৈধ অনুপ্রবেশ মামলায় জামিন দেন। তবে যশোর কোতোয়ালি থানার ৫৪ ধারায় দায়ের করা অপর একটি মামলায় তাকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। কারাগারে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে জানিয়েছেন কাজলের আইনজীবী সুদীপ্ত ঘোষ।
কাজলের ছেলে মনোরম পলক বলেন, বাবাকে ফিরে পেয়েছি এতেই অনেক খুশি। বাবার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। একই সাথে পিতার দ্রুত জামিনের দাবিও করেছেন তিনি।
জানা যায়, যুব মহিলা লীগর বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিন কেন্দ্রিক কারবারে জড়িতদের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তাতে আসামির তালিকায় শফিকুল ইসলাম কাজলের নামও রয়েছে। মাগুরা-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর গত ৯ মার্চ শেরে বাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলাটি করেন।
সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় দৈনিক পক্ষকাল অফিস থেকে বের হন। এরপর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে পরদিন ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসী নয়ন। পরে ১৮ মার্চ রাতে কাজলকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চকবাজার থানায় মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক।