বাঁধ বাঁচলে বাঁচবে জীবন। তাই ঘরে বসে থাকার জো নেই গ্রামবাসীর। বন্যার পানি থেকে বাঁচার জন্য হাতে ঝুড়ি-কোদাল নিয়ে রাতদিন কাজ করছেন তারা। লক্ষ্য নদী ভাঙন থেকে ঘর-বাড়ি ও ভিটে-মাটি রক্ষা এবং ওয়াপদা বাঁধ নির্মাণ করা। চলছে এক নিরন্তর সংগ্রাম। এরই মাঝে নামাজের সময় হলে কাঁদা পানিতে দাঁড়িয়েই নামাজ আদায় করে নিচ্ছেন গ্রামবাসী। কাঁদা পানিতে নামাজ আদায়ের এমন একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
শুক্রবার (২২ মে) কয়রা উপজেলার দশহালিয়া গ্রামে ভেঙে যাওয়া নদীর বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করার সময় নামাজের ওয়াক্ত হলে জামাতে নামাজ আদায় করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুপার সাইক্লোন আম্পানের কারণে খুলনার কয়রা উপজেলায় চারটি ইউনিয়ন। বাতাস আর পানির তোপে উপকূলবর্তী এ উপজেলার ১৪টি পয়েন্টে নদী ভাঙনের কারণে এসব এলাকা প্লাবিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায়। প্রায় দু কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঁধ ধ্বংস হয়ে গেছে এখানে। ফলে নিয়মিত জোয়ার-ভাটার পানি উঠানামা করছে। বন্যার হাত থেকে এলাকা বাঁচাতে রাতদিন লড়ছেন গ্রামবাসী। বিশ্রামের কোনো সুযোগ নেই তাদের, কাজের ফাঁকে দলবেঁধে নামাজ আদায় শেষে আবারও কাজে লেগে পড়ছেন তারা।
মুঠোফোন আলাপে নামাজের জামাতের ইমাম আহসান হাবিব বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘জোয়ার আসলে আর ভাঙনে কাজ করা যায় না। আবার ভাটার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ভাটা আসলেই শুরু হয় হরদম কাজ। সারাদিন কাজ করে ঠিকভাবে শেষ না করতে পারলে দেখা গেলো অল্প একটু বাকি থাকার কারণে আবার জোয়ারের পানিতে সব ভেঁসে যায়। এছাড়া নামাজের জন্য বিরতি দিলে আবার সবাইকে কাজে পাওয়া যায় না অন্যদিকে জোয়ারের পানি চলে আসে ফলে কাজ করার মাঝে ভাঙনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে হয়েছে।'
চারদিকে থৈ থৈ পানি, ডুবে আছে পুরো গ্রাম। জোয়ার-ভাটার সঙ্গে বসবাস লক্ষাধিক মানুষের। ভঙ্গুর নদীর বাঁধ জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আম্পানের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছাসে ১৫ কিলোমিটারের অধিক জায়গাজুড়ে নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঝড় ও বন্যার কারণে কয়রা উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে ছোটবড়ো ৫ হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। আভ্যন্তরীণ প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা বিধ্বস্ত হয়েছে। জোয়ার ভাটার পানিতে আটকা পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। খাদ্য ও খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এসব ব্যাপারে কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'কয়রার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাঁধ নির্মাণ না করতে পারলে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে। আমরা ত্রাণ নয়, আগে বাঁধ নির্মাণ চাই। এ অঞ্চলের মানুষের একটাই দাবি ত্রাণ নয় আগে বাঁধ নির্মাণ। মজবুত বাঁধ নির্মাণ করার মধ্যে দিয়ে এ এলাকার মানুষের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব।'