একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সামগ্রিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পূর্ণ মনোনিবেশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমান সংসদের মেয়াদ বাকি আর মাত্র পাঁচ মাসেরও কম। সংবিধান অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যেই একাদশ জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি দশম সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আইন অনুযায়ী দশম সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই হিসেবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। অক্টোবরের শেষে অথবা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার সকল প্রস্তুতি আছে কমিশনের। ধারণা করা হচ্ছে ডিসেম্বরের শেষার্ধ্বে অথবা জানুয়ারির প্রথম দিকে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমশিন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেন, সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে যত ধরনের প্রস্তুতির দরকার সবই নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের শতকরা ৮০ ভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন কমিশন যে নির্দেশনা দেবে তা বাস্তবায়ন করব। নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি হিসেবে যা যা করা দরকার তার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলাদা একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং সামনে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করব সেগুলোর চেকলিস্ট তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছে।
ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের পুরোদমে প্রস্তুতি কার্যক্রম চলছে। সকল ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কেনাকাটার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি কাজ তফসিল ঘোষণার আগেই সম্পন্ন হবে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে তিনশো আসনের জন্য পৃথকভাবে আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। ইসি সচিবালয় এই ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত করছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এগুলো নির্বাচনী এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এরপরে দাবি-আপত্তি গ্রহণ করা হবে।
তিনশো সংসদীয় আসনের সমতল এলাকায় ৩৯ হাজার ৩৮৭টি এবং পার্বত্য এলাকায় ৬১৩টি ভোট কেন্দ্র থাকছে। ভোটকক্ষ হবে প্রায় দুই লাখ। ভোটকেন্দ্রের নীতিমালা অনুযায়ী, গড়ে আড়াই হাজার ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকেন্দ্র এবং গড়ে ৬০০ পুরুষ ভোটারের জন্য ও ৫০০ নারী ভোটারের জন্য একটি করে ভোট কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে। তবে ভোটগ্রহণের জন্য ৪২ হাজার ভোট কেন্দ্র থাকলেও আরো পাঁচ হাজার কেন্দ্র বাড়তে পারে। এগুলোর খসড়া তালিকা জেলা-উপজেলায় প্রকাশ করা হয়েছে। যারা স্টেকহোল্ডার আছে তাদের যদি কোন আপত্তি থাকে সে বিষয়ে শুনানী গ্রহণ করা হবে, সেগুলো সরেজমিনে তদন্ত করে তারা ৩০ আগস্টের মধ্যে নিষ্পত্তি করে কমিশনে কাছে গেজেট নোটিশ পাঠাবে। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ভোটের সরঞ্জাম ক্রয়ের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য ৩৪ লাখ ৪০ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ৬ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ স্ট্যাম্পপ্যাড, ১৭ হাজার ৪২০ কিলোগ্রাম লাল গালা, ৫ লাখ ৭৮ হাজার অফিসিয়াল সিল, ১১ লাখ ৫৬ হাজার মার্কিং সিল, ৮৭ হাজার ১০০ ব্রাশ সিল, ৬ লাখ ৬৫ হাজার অমোছনীয় কালির কলম কেনা হবে। এছাড়া প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার রিম কাগজ প্রয়োজন হবে। এগুলো ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। সহসাই প্রতিষ্ঠানগুলো সরঞ্জামাদি সরবরাহ করবে।
ক্রয় কমিটির প্রধান খোন্দকার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, আমরা কেনাকাটার জন্য ইতোমধ্যে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছি। মালামাল সংগ্রহের কাজও শুরু হয়েছে।
ইতোপূর্বে সিটি নির্বাচনগুলোতে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করলেও সংসদ নির্বাচনে বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের কথা ভাবছে ইসি। তবে এজন্য আরপিও সংশোধন করতে হবে। সেই প্রক্রিোয় অগ্রগতি না থাকায় বিকল্প প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে ইসি সচিবালয়।
কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী চেকলিস্ট তৈরি করছে ইসি সচিবালয়। চেকলিস্টে তিনশো আসনের ভোটার তালিকা প্রস্তুত, ভোটকেন্দ্রের তালিকা, আরো ভোটকেন্দ্র তালিকাভুক্তি প্রয়োজন আছে কিনা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রস্তুত, নির্বাচন সামগ্রী কেনাকাটা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত, প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, নির্বাচনী ম্যানুয়াল তৈরি, মনোনয়নপত্র মুদ্রণ, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দসহ নির্বাচনের জন্য সামগ্রিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়গুলো থাকবে।
এছাড়াও নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি ও নির্বাচনের কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবার অবহিতকরণসহ সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে কমিশন।