নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে যান চলাচল শুরু
টানা ৩২ ঘণ্টা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচির পর শান্ত হয়ে ঘরে ফিরেছেন ঢাকা ইপিজেডের বন্ধ দুই কারখানা লেনি ফ্যাশন্স ও লেনি অ্যাপারেলস এর শ্রমিকরা। পাওয়ানাদি পরিশোধের তারিখ ঘোষণার পর এ সিদ্ধান্ত নেন শ্রমিকরা।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের ইপিজেড এলাকা থেকে আন্দোলনকারী শ্রমিকরা সরে গেলে যান চলাচল শুরু হয়। এর আগে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।
সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আন্দোলনরত শ্রমিকদের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করছেন ডিইপিজেডের কর্মকর্তারা। তবে তাদের এ বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি।
শ্রমিকরা জানিয়েছে, বৈঠক শেষে বুধবার বেলা ২টার দিকে ইপিজেডের ফটকের সামনে এসে কর্তৃপক্ষ জানায় যে, আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে শ্রমিকদের কাগজপত্র জমা নেয়া শুরু হবে। পরে পর্যায়ক্রমে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করা হবে।
পরে ঢাকা ইপিজেড এর নির্বাহী পরিচালক মো. আহসান কবীর এর স্বাক্ষরকৃত একটি নোটিশ থেকে জানা যায়, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ এর মধ্যে উক্ত দুই কারখানার সকল শ্রমিকের সমস্ত পাওনাদি পরিশোধ করা হবে। উক্ত সময় পর্যন্ত সকলকে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করা হয় সে নোটিশে।
এ সিদ্ধান্ত আসার পরে আন্দোলনকারীরা সড়ক থেকে সরে যায় এবং যান চলাচল শুরু হয়।
বিক্ষোভকারী একাধিক শ্রমিক জানান, চার বছর আগে শ্রমিকদের বেতন বকেয়া রেখে বন্ধ হয়ে যায় লেনী ফ্যাশন ও লেনী অ্যাপারেলস কারখানা। এরপর কারখানা দুটির একটি বিক্রি করে দেয় বেপজা। কারখানা বিক্রির টাকা ব্যাংকে জমা থাকলেও শ্রমিকদের বকেয়া এখন পরিশোধ করা হয়নি।
তারা জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকালে বকেয়া বেতনের দাবিতে ডিইপিজেডের সামনে জড়ো হন এ দুটি কারখানা শ্রমিকেরা। পরে তারা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাতে ৯টার দিকে সড়ক ছেড়ে দিয়ে ডিইপিজেডের পুরাতন অংশের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন। সারারাত সেখানেই অবস্থান করেন। আজ বুধবার সকালে আরো শ্রমিক তাদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে ফটকের সামনে ও মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা।
সকালে ডিইপিজেডের পুরাতন অংশের কারখানার শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে তাদেরকে বাধা দেয়া হলে কাজ করতে আসা শ্রমিকেরা ফিরে যান।
লেনি ফ্যাশনসে ৭ বছর আয়রন ম্যান পদে চাকরি করেছেন শামসুন্নাহার। অন্য শ্রমিকদের সাথে এখন তিনিও আন্দোলনে নেমেছেন নিজের পাওনা আদায়ে। শামসুন্নাহার বলেন, আমরা তো আমাদের পরিশ্রমের টাকা চাইতে আসছি, মাগনা টাকা চাইতে আসি নাই। আমি ৭ বছর এখানে কাজ করছি। ডেট এর পর ডেট দেয় শুধু। এই ৩০ তারিখ (নভেম্বর) টাকা দেয়ার কথা এখন উল্টাপাল্টা কথা শুরু করছে।
শ্রমিক মেরিনা আক্তার বলেন, আমরা কাল থেকে কষ্ট করতেছি তারপরেও কোনো সমাধান হয় নাই। আমাদের একটাই দাবি আমরা এখান থেকে টাকা নিয়ে যাবো। আমাদের বলা হয়েছিল ৩০ নভেম্বর টাকা দিবো, যদি দিত তাহলে আর এরকম ঝামেলা করতে হতো না। যেহেতু তারাও ঝামেলা করতেছে আমরাও আমাদের ঝামেলা নিয়ে গতকাল থেকে এখানে বসে আছি। আমরা আমাদের টাকা নিয়ে এখান থেকে ঘরে ফিরবো।
অপর শ্রমিক ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ৪ বছর আগে পাওনা না দিয়ে হঠাৎ করে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিছে। এখন আমরা বকেয়া বেতনের জন্য আন্দোলন করতেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা না দেয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
শিল্প পুলিশ-১ (আশুলিয়া) এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, সমস্যা সমাধানে ডিইপিজেড কর্তৃপক্ষ শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। আমরাও শ্রমিকদের বুঝানোর চেষ্টা করছি। সড়ক অবরোধ করায় যানবাহনগুলোকে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে হচ্ছে।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) আনোয়ার পারভেজ বলেন, বেপজার পক্ষ থেকে শ্রমিকদের বুঝানোর চেষ্টা চলছে। তাদেরকে আমরা চাইলেও এই মুহূর্তেও কেন দুটি কারখানার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না সেটি বুঝানোর চেষ্টা করছি। কারখানা বিক্রির পদ্ধতি, আইনি প্রক্রিয়া এবং বকেয়া পরিশোধের পদ্ধতির বিষয়টি তাদের জানানো হচ্ছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় উত্তরবঙ্গের সাথে সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটছে। ঢাকা থেকে আশুলিয়া হয়ে যে-সকল যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করত সেগুলো এখন কয়েক কিমি পথ বাড়তি ঘুরে যাত্রা করতে হচ্ছে। বাইপাইল-চন্দ্রা মহাসড়কের বদলে গাড়িগুলো ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ব্যবহার করে ধামরাই কিংবা কালামপুর হয়ে গাজীপুর এবং টাঙ্গাইল দিয়ে আসা-যাওয়া করছে। এতে বিপুল চাপ বেড়েছে ধামরাই ও কালামপুর এলাকায় স্থানীয় সড়কগুলোতে। লাগছে অতিরিক্ত সময়, ভুগছেন সাধারণ যাত্রীরা।