রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ পীরগাছা জোনাল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রোষানলে পড়েছেন কান্দি ইউনিয়নের প্রায় ১৩ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক। বার বার লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি রাতের বেশিরভাগ সময় অন্ধকারে থাকছেন ইউনিয়নের বাসিন্দারা। ঈদের দিনসহ টানা তিনদিন ও একদিন পরে আরো দুইদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আক্রোশের কারণে দীর্ঘদিন থেকে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন তারা বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে মুজিববর্ষে সরকারের শতভাগ ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রম ভেস্তে যেতে বসেছে।
বিনা কারণে জরিমানা ও ভুতুড়ে বিলসহ বিভিন্ন বিষয়ে গ্রাহকরা অভিযোগ করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ পীরগাছা জোনাল অফিসের আওতায় প্রায় ৭০ হাজার গ্রাহকের জন্য সংযোগ লাইন ৬টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে আলাদা আলাদা সংযোগ লাইন থাকলেও শুধুমাত্র একটি সংযোগ লাইনের মাধ্যমে কৈকুড়ী ও কান্দি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ওই দু‘টি ইউনিয়নে ৩০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে শুধু কান্দি ইউনিয়নে রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার গ্রাহক। দুই ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া লাইনটি ৪ নম্বর ফিড হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য ফিডের গ্রাহকরা দিনে গড়ে ৪-৬ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়লেও ৪ নম্বর ফিডটি থাকে সর্বক্ষণ লোডশেডিংয়ে কবলে। এছাড়া প্রায়ই একই ফিডের কৈকুড়ী ইউনিয়ন চালু রেখে কান্দি ইউনিয়ন বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। ফলে কান্দি ইউনিয়নের গ্রাহকরা প্রায় প্রতিদিনই ১০-১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বঞ্চিত হচ্ছেন। গ্রাহক সেবার হট লাইনে ফোন করেও কোন সমাধান মেলে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পীরগাছা জোনাল অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচরারীরা দীর্ঘদিন থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। তাদের দুর্নীতির বিষয়ে একাধিক লিখিত অভিযোগ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে তারা দলগত ভাবে বিষয়টি প্রতিহত করে আসছেন।
এছাড়া কৈকুড়ী ও কান্দি ইউনিয়নের জন্য চৌধুরাণীতে একটি অভিযোগ কেন্দ্র করা হলেও তা কাজে আসছে না। ওই কেন্দ্রের ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে ওই ইনচার্জ তার দুর্নীতি দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরতদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের কারণে গ্রাকরা হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কান্দি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য প্রশান্ত কুমার মিশ্র বলেন, ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রোষানলে পড়ে গ্রাহকরা চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, তারা গ্রাহকদের সঙ্গে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন। তাদের এমন আচরণের কারণে কান্দি ইউনিয়নের গ্রাহকরা চরম বিপাকে পড়েছে।
রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর পরিচালক আব্দুর রহিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অনিয়ম ও দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বিদ্যুৎ বিভাগে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে।
এদিকে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মঞ্জুরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, কান্দি ইউনিয়নের জন্য নির্ধারিত ৪ নম্বর ফিডটি দীর্ঘ ও গ্রাহক সংখ্যা বেশি থাকায় সমস্যা হচ্ছে। তবে ওই ইউনিয়নের জন্য আলাদা সংযোগ লাইনের কাজ চলছে।
তবে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর পীরগাছা জোনাল অফিসের ডিজিএম আব্দুল জলিল অভিযোগ অস্বীকার করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে হলে ঝড় থামাতে হবে। আর বিদ্যুতের জন্য দোয়া করতে হবে। ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।