দ্বিতীয় দফায়ও ঢিলেঢালা লকডাউনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া!

, জাতীয়

মনি আচার্য্য, রিজিওনাল স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | 2023-08-28 05:47:16

করোনাভাইরাস রোধে দেশের অন্যসব এলাকার মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়াও ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিল অঘোষিত লকডাউন বা সাধারণ ছুটি। কার্যকরে প্রশাসনের গাফেলতি ও স্থানীয়দের সাড়া না পাওয়া জেলায় করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলায় করোনায় আক্রান্ত ৪০৬ জন। এছাড়া এক হাজারেরও বেশি নমুনার ফলাফল আসতে বাকি। যা নিঃসন্দেহে জেলার করোনা পরিস্থির ভয়াবহতার দিক তুলে ধরে।

এ অবস্থায় জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শনিবার (১৩ জুন) দিনগত রাত ১২টা থেকে জেলার সদর উপজেলার তিনটি এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন করে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় লকডাউন ঘোষণা করা হলেও এর প্রভাব প্রথম দফার লকডাউনের মতোই। ফলে এ লকডাউনের কার্যকরীতা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

এলাকার প্রবেশদ্বারে বাঁশ দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করা হয়েছে

স্থানীয়রা ও বিভিন্ন মহলের বিশিষ্টজনরা অভিযোগ করে বলেন, দ্বিতীয় দফার লকডাউনও প্রথম দফার লকডাউনের মতো ঢিলেঢালাভাবে পালন করা হচ্ছে। এতে কার্যত করোনা মোকাবিলা হবে না ঠিকই কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের কাজের তালিকা বৃদ্ধি পাবে শুধু। তাই লোক দেখানো লকডাউন না দিয়ে কার্যকর লকডাউন দিতে হবে। না হলে জেলার করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহতার দিকে যাবে যা নারায়ণগঞ্জকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সোমবার (১৫ মে) জেলার সদর উপজেলার তিন রেড জোন এলাকা পূর্বপাইকপাড়া, মধ্যপাড়া ও কাজিপাড়া ঘুরে এবং স্থানীয় বিষ্টিজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রবেশদ্বারে একজন করে আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন

পূর্বপাইকপাড়া, মধ্যপাড়া ও কাজিপাড়া সকাল থেকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লকডাউন করা এই তিন এলাকার প্রবেশদ্বারে বাঁশ দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করা হয়েছে। আর এই ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য প্রতিটি প্রবেশদ্বারে একজন করে আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। যানবাহনের যাতায়েত বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই মানুষের চলাফেরা। অন্যন্য দিনের মতো স্বাভাবিক রয়েছেন চলাফেরা ও খোলা রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কার্যত যান চলাচল বন্ধ করা ছাড়া এই লকডাউনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আর কোনো বিধি নিষেধেই মানা হচ্ছে না। ফলে করোনা রোধে লকডাউনের কোনো কার্যকরীতা নেই বললেই চলে।

লকডাউন হওয়া এই তিন এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, লকডাউন মানে তারা বুঝেন এই এলাকা দিয়ে যানবাহন চলবে না। বাকি সব কাজ করা যাবে। তাই তারা সেভাবেই চলাফেরা করছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় বিশিষ্ট জনরা বলছেন, লকডাউন কার্যকরে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্থানীয়দের সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। না হলে জেলার করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা ঠেকানো যাবে না।

লকডাউনেও খোলা আছে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

এ বিষয়ে  জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য বার্তা২৪.কমকে জানান, লকডাউন কার্যকরে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। সোন্নগে জেলার মানুষদের করোনার বিষয়ে আরও সচেতন করে তুলতে হবে। এছাড়া নুমনা পরীক্ষার পর দীর্ঘ সময় কেটে যাচ্ছে এর ফলাফল আসতে। এই দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া জেলা সদর হাসপাতলে একটি পিসিআর ল্যাব নির্মাণেরও দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানানো হচ্ছে, এই তিন এলাকায় লকডাউন কার্যকরীভাবে করতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এই তিন এলাকায় গিয়ে লকডাউনের নিয়ম স্থানীয়দের মানতে উৎসাহ দিচ্ছেন এবং প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করছেন।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির প্রস্তাবনায় এই তিন এলাকায় আমরা লকডাউন ঘোষণা করেছি। লকোডাউন যেন কার্যকরভাবে পালন করা হয় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। কোথাও যদি লকডাউন ঢিলেঢালাভাবে পালন করা হয় সে বিষয়ে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর