যমুনায় বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি

, জাতীয়

সাহিদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, জামালপুর | 2023-08-23 06:05:44

বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বেড়ে শুরু হয়েছে ভাঙন। এরই মধ্যে নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে যমুনা তীরবর্তী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানি ইউনিয়নের খোলাবাড়ী এবং ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ও বেলগাছা ইউনিয়নের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে বালুর ব্যাগ ফেললেও ভাঙন থামানো যাচ্ছে না।

ভাঙন আতঙ্কে এরই মধ্যে সহস্রাধিক পরিবার বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। গত এক মাসে দেওয়ানগঞ্জে ভাঙনে শতাধিক বসতবাড়ি, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও খোলাবাড়ী বাজারের সিংহভাগ যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে সদ্য নির্মিত বাহাদুরাবাদঘাট নৌথানা। তাই ভাঙন রোধে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, বৃষ্টিতে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট ভাঙন রোধে পাউবো’র আপৎকালীন তহবিল থেকে জেলার তিনটি স্প্যানের জায়গা নির্ধারণ করে প্রতিটিতে বালুর (জিও) ব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে মোতাবেক গত দুই সপ্তাহ ধরে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

জানা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের খোলাবাড়ী এলাকায় যমুনা নদীর ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক মাসের ভাঙনে খোলাবাড়ী গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি ও খোলাবাড়ী বাজারের সিংহভাগ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে খোলাবাড়ী গ্রামের প্রায় দুইশ’ পরিবার। বাপ-দাদার পৈতৃক ভিটাবাড়ি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে এসব পরিবার। হুমকির মুখে পড়েছে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাহাদুরাবাদঘাট নৌথানা।

অপরদিকে ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের কাজলা ও কাটমা গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি ও বেলগাছা ইউনিয়নের মন্নিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রায় ২০-২৫টি বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সব কিছু হারিয়ে তারা এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) সকালে খোলাবাড়ী এলাকায় গেলে নদী ভাঙনের ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, প্রায় এক বছর ধরে যমুনার ভাঙন চলছে। এরই মধ্যে তিনটি গ্রাম, দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও খোলাবাড়ী বাজারের সিংহভাগ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ঠেকাতে যে বালির বস্তা ফেলছে, তা কোনো কাজে আসছে না। খোলাবাড়ী ও আশপাশের এলাকা রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি তাদের।

চিকাজানি ইউনিয়নের খোলাবাড়ী এলাকার আমির হোসেন (৭৫) বার্তা২৪কমকে বলেন, আমার বয়সে ১৫ বার বাড়ি ভাঙছি। প্রতি বছর ভাঙার কারণে আমাদের জমাজমি, স্কুল-মাদরাসা সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন শক্তিশালী বাঁধ দেওয়া না হলে বালুর বস্তা ফেলে কোনো কাজ হবে না।

একই এলাকার শফিকুল মিয়া নামে আরেক বৃদ্ধ বলেন, নদীর স্রোত অনেক শক্তিশালী, তাই এখানে বালুর বস্তা ফেললেও তা কোনো কাজে আসছে না। বালুর বস্তা ফেলার কয়েকদিন পরেই ভাঙন শুরু হয়। যেভাবে নদী ভাঙছে, তাতে মনে হয় এবার নৌথানা রক্ষা পাবে না।

যমুনায় বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ছবি: বার্তা২৪.কম

স্থানীয় মো. আব্বাস আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, নদী গর্ভে আমার ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমি নিঃস্ব। কোথায় যাবো, কার কাছে হাত পাতব, কিছুই বুঝে আসছে না। আসলেই আমাদের সবার কপাল পোড়া।

ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের কাজলা গ্রামের ফজলু মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, যা ছিল সব নদীতে চলে গেছে, আমরা এখন বউ পোলাপান নিয়ে কোথায় থাকব। কেউ আমাগর খোঁজখবরও নেয় না। আমরা কি মানুষ না?

বালুর বস্তা ফেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সোলার কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার দাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভাঙন ঠেকাতে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। তবে কাজের পরিধি বৃদ্ধি না করলে এ বস্তা কোনো কাজে আসবে না। কাজের পরিধি বৃদ্ধি করলে নৌথানা ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাইদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে খোলাবাড়ী, কাজলা এবং কাটমা এলাকার ১৪০ মিটার এলাকায় ১২ হাজারেরও বেশি জিও ব্যাগ ফেলা (ডাম্পিং) হচ্ছে। এছাড়া খোলাবাড়ী থেকে ফুটানী বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার জুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প দাখিল করা হবে। প্রকল্পটি পাস হলেই স্থায়ী বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর