ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত ৭ পুলিশ সদস্যকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছেন মার্জান ইসলাম নামে এক যুবক। করোনা আক্রান্ত ওই পুলিশ সদস্যদের কেউ বাসা ভাড়া দিচ্ছিল না। এমন সময় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মার্জান। বিনা ভাড়ায় নিজের বাড়ির ৮টি কক্ষে ওই পুলিশ সদস্যদের আশ্রয় দিয়েছেন তিনি।
মার্জান ইসলাম নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গাংকুল পাড়ার নজরুল ইসলামের ছেলে। বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক পাস করেছেন। করোনার কারণে বর্তমানে এলাকায় অবস্থান করেছেন তিনি। অন্য কেউ করোনায় আক্রান্ত পুলিশদের থাকার জন্য বাসা দিতে না চাইলেও দেশের দুর্যোগের কথা ভেবে সহায়তায় এগিয়ে আসেন ওই যুবক।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ মে করোনার পরীক্ষার জন্য নাসিরনগর থানার অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য নমুনা দিয়েছিলেন। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ২ জুন তাদের মধ্য থেকে ৪ পুলিশ সদস্যের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। ৩ জুন পুলিশের আরও ২ সদস্য ও ১২ জুন ১ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হন। আক্রান্তদের মধ্যে ২ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ও ৫ জন কনস্টেবল রয়েছেন।
এদিকে থানা কমপ্লেক্সের ভেতরে করোনায় আক্রান্তদের থাকা নিরাপদ না হওয়ায় বাইরে বাসা খুঁজতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। পরে উপজেলার বাসিন্দা মার্জানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন থানার ওসি। মার্জান সঙ্গে সঙ্গে বিনা ভাড়ায় তার নিজ বাসা দিতে রাজি হয়ে যান। এ সময় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য বাসাটি ছেড়ে দেন তিনি। গত ৪ জুন থেকে মার্জানের ৪ তলা ভবনের ৩ তলার ৮টি কক্ষে থাকছেন করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসিরনগর উপজেলা সদরের গাংকুল পাড়ায় থানার পাশেই মার্জানের পরিবারের ৪তলা একটি বাড়ি আছে। বাড়িটির নিচ ও দ্বিতীয় তলায় উপজেলা সাবরেজিস্ট্রির অস্থায়ী কার্যালয়, তৃতীয় তলায় গত কয়েক মাস আগেও ৪টি পরিবার ভাড়ায় থাকত এবং চতুর্থ তলায় পরিবার নিয়ে ওই যুবক থাকেন। ৪ ভাড়াটিয়া পরিবারের কাছ থেকে মাসে ২০ হাজার টাকা পেতেন তিনি। করোনার কারণে ভাড়াটিয়ারা বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে ৩ তলার এই ৮টি কক্ষে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরা আইসোলেশনে রয়েছেন। এছাড়াও ওই যুবক ব্যক্তিগত অর্থায়নে কর্মহীন, বেকার, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া শতাধিক মানুষকে সহযোগিতা করছেন।
এই বিষয়ে মার্জান ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘করোনার কারণে সব শ্রেণির মানুষই দিশেহারা। দেশের এই সংকটময় সময়ে পুলিশ সদস্যদের সামান্য সেবা করতে পেরে আমি আনন্দিত। যতদিন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকবে ততদিন আমার এই বাড়িটি আক্রান্ত মানুষদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।’
নাসিরনগর থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নাসিরনগরে প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে যখন মালয়েশিয়া প্রবাসী মারা যান তখন মরদেহ নেয়ার জন্য কোনো যানবাহন পাচ্ছিলাম না। ওই সময় রাত ৩টার দিকে একটি ভ্যান ভাড়া করে আনেন মার্জান ইসলাম। এমনকি তার ভবনের ৮টি কক্ষে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের বিনা ভাড়ায় থাকতে দিয়েছেন। তার কাছে পুলিশ বিভাগ কৃতজ্ঞ।’