রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬ পাটকল রক্ষায় আন্দোলনে শ্রমিকরা

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা | 2023-08-28 05:56:08

রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল রক্ষায় খুলনাঞ্চলের ৯টিসহ সারাদেশের ২৬টি জুট‌মিলে একযোগে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা। সিবিএ ও নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে কঠোর অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

এ উপলক্ষে শ‌নিবার (২৭ জুন) খুলনার শিল্পাঞ্চল খা‌লিশপুরের মিলগেটে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে আছে রোববার সংবাদ সম্মেলন, সোমবার শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের রাজপথে অবস্থান, মঙ্গলবার মিলগেটে ও অভ্যন্তরে শ্রমিকদের অবস্থান।

এসব কর্মসূচির পরে মিলের উৎপাদন বন্ধের পরিকল্পনা বাতিল না করলে পাটকল রক্ষায় প্রয়োজনে আত্মাহুতির মতো কঠোর কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে বলেও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানান।

জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা জানতে পেরেছি, সরকারের উচ্চ মহলের বিবেচনায় রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে অবশিষ্ট ২৫টি পাটকল আদমজী জুট মিলের কায়দায় বন্ধ করে শ্রমিকদের কর্মের অবসান ঘটানো হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত অন্যায় ও অযৌক্তিক। পাট শিল্পে লোকসানের ধুয়া তুলে এখন বন্ধ করে ধ্বংসের চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটা মাথা ব্যথার কারণে মাথা কেটে দেওয়ার শামিল। আমরা অতীতেও বলেছি, পাট শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও অহংকার, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এর আবেগ জড়িয়ে আছে। বিশ্ব পরিবেশ রক্ষায় যখন পাট পণ্যের স্বীকৃতি বাড়ছে, তখন দেশের পাটকল বন্ধ করার ষড়যন্ত্র কার স্বার্থে?

এতে আরও বলা হয়েছে, পাটকলগুলোকে উন্নত প্রযুক্তির মেশিন সংযোজন করে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা সম্ভব। আমরা উন্নত প্রযুক্তি সংযোজনে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছিলাম। বলেছিলাম, পাট শিল্পে নিয়োজিত মাথাভারি প্রশাসনের সংস্কার করতে। যে অদক্ষ আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণে এই সেক্টর পরিচালিত হয়েছে, যারা পাট ক্রয়ে দুর্নীতি, উচ্চ মূল্যে নিম্নমানের পাট ক্রয়, মৌসুমে সময়মতো পাটসরবরাহ না করা এবং উৎপাদিত পাটপণ্য বিপণনে কোনও কার্যকর ভূমিকা রাখেনি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে এখন তাদেরই প্রস্তাবনায় বিদ্যমান পাটকলগুলো বন্ধ করে শ্রমিকদের কর্মহীন করা অমানবিক ও অন্যায়।

পাটকলের কার্যক্রম বন্ধ

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ- নন সিবিএ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘পাটকল আধুনিকায়ন করে নতুনভাবে যন্ত্রপাতি বসানোর কথা বহু আগে থেকে বলা হয়েছে। পাটকল বন্ধ না করে উন্নত প্রযুক্তির আধুনিক মেশিন সংযোজন করে মিল চালু রাখার দাবি জানিয়েছে আমরা। শ্রমিকদের এ ন্যায্য দাবি না মানা হলে পাটকল চালু রাখার স্বার্থে আমরা আত্মাহুতির মতো আন্দোলনে নামব। এরইমধ‌্যে মিল বন্ধের খবর শুনে শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা চরম হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছে।’

ক্রিসেন্ট জুটমিল শ্রমিক হাশেম ফারাজী বলেন, ‘আমরা জীবনের শুরু থেকে শুধু পাটকলে কাজ করছি। মিল বন্ধ কি করব? আর তো কোনো কাজ আমরা শিখি নাই। গত ২৬ বছর এই পাটকলে কাজ করে যা পাই তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখের আহার যোগাই। তাই পাটকল বন্ধ হবার খবর শুনে আমাদের চোখের ঘুম চলে গেছে।’

প্লাটিনাম জুট মিল শ্রমিক আবু হুসাইন জানান, পাটকলে লস হলে ভর্তুকি দেয় সরকার। বর্তমান সরকার বন্ধ মিল চালু করে শ্রমিক বান্ধব সরকারের যে খেতাব পেয়েছে তা নষ্ট করতে একটি মহলের চক্রান্ত চলছে। সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মিল চালু রাখার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন এ সব খেটে খাওয়া সাধারণ শ্রমিকরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর