রাজধানীর পূর্বাঞ্চল, আশকোনা হাজি ক্যাম্প থেকে শুরু করে কুড়িল বনরূপা হাউজিং পর্যন্ত নতুন একটি খালের উদ্বোধন করা হয়েছে।
খালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রীর উদ্দেশে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকার সকল খালের মালিক ঢাকা জেলা প্রশাসক আর খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। কিন্তু যখনই খাল ভরাট হয়ে যায় গালি খাই আমরা। ভৌত অকাঠামোসহ ওয়াসার যত ধরণের টেকনিক্যাল জনবল আছে, আমাদের দিন আমরা কাজ করে দেখিয়ে দেব।
শনিবার (২৭ জুন) দুপুরে কাওলা সিভিল এভিয়েশন কবরস্থানের পাশে খননকৃত খালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. শরীফ উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্কেল খন্দকার মাহবুব আলম ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই আশকোনা কাওলা এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিতো। মানুষের ঘরে পানি ঢুকে যেত। ওয়াসাকে বলেছি খাল পরিষ্কার করতে তারা বলে সিভিল এভিয়েশন পরিষ্কার করবে, আর সিভিল এভিয়েশন বলে ওয়াসা করবে। দুই সংস্থার মধ্যে সমস্যা কিন্তু এলাকার দুর্ভোগে পরে আর গালি খেতে হয় আমাদের।
মাত্র ২৭ দিনের মধ্যে ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার খাল খনন করে ওয়াসাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে মেয়র বলেন, ঢাকার খালগুলো পরিষ্কার করার জন্য ওয়াসার এমডিকে বার বার বলেছি। ওয়াসার এমডি করব করব করে আর করেনি। এবার আমরা অপেক্ষা না করে সিভিল এভিয়েশনের জায়গায় নিজেদের অর্থায়নে মাত্র ২৭ দিনের মাথায় নতুন একটি খাল খনন করে উদ্বোধন করে দিলাম। আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করি তার প্রমাণ এই খাল। এই খালকে আধুনিয়কায়ন করে হাতিরঝিলের আদলে সাজাতে চাই। তাই আপনাকে (মন্ত্রীকে) প্রস্তাব দিতে চাই। ওয়াসার সকল জনবল ও অবকাঠামো আমাদের দিন আমরা কাজ করে দেখিয়ে দেব।
তিনি বলেন, আইনগতভাবে ঢাকার সব খালের মালিকানা জেলা প্রশাসক। আর খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ওয়াসার। ওয়াসার জনবল আছে, ভৌত অবকাঠামা আছে। ওয়াসার সব কিছু আছে, তারা দেরি করে আর কথা শুনতে হয় আমাদেরকে।
বনানী এলাকার নেভি হেডকোয়ার্টর এলাকার দীর্ঘ দিনের জলাবদ্ধতা নিরসনের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি এক মাসের মধ্যে নেভি হেড কোয়ার্টার এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের সমাধান হবে। একইভাবে সংসদ এলাকার খেজুর বাগান এলাকার জলাবদ্ধতার নিরসনে দুই মাসের মধ্যে কাজ শুরু করার প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র।
এছাড়া উত্তরা ৪ এবং ৬ নং সেক্টরে ৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার আরসিসিপি পাইপ নির্মাণের মাধ্যমে দীর্ঘ দিনের জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, এলিভেটেড এক্সেপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেলের কাজ হচ্ছে। তাদের বলে দিয়েছি জনভোগান্তি লাঘবে ড্রেন না করলে কাজ বন্ধ করে দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের দীর্ঘ দিনের জলাবদ্ধতার নিরসন হতে যাচ্ছে। বিশেষ করে হাজীক্যাম্প, মোল্লারটেক, প্রেমবাগান, আশকোনা, তালতলা, দক্ষিণ খান, আশিয়ান সিটি, কাওলা বাজার, দক্ষিণ দিকে বনরূপা হাউজিং এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সিভিল এভিয়েশনের জায়গায় ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। গত ৩০ মে লা মেরিডিয়ান হোটেলের বিপরতী পাশে এই খাল খনন কাজের উদ্বোধন করেন মেয়র। কাজ শেষ করে ২৭ জুন খননকৃত খালের উদ্বোধন করা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই খাল খনন করায় স্থানীয়রা ডিএনসিসিকে ধন্যবাদ জানান।
সিভিল এভিয়েশনের এই খালটির দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এর গভীরতা ২০ ফুট। ১:১ স্লোপে খালটি খনন করা হয়েছে। এতে সব সময় পানির প্রবাহ থাকবে। খাল খনন করতে প্রায় ২৭ হাজার কিউবিক মিটার মাটি ও অন্যান্য বর্জ্য উত্তোলন করা হয়।