দেশের করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ রয়েছে সকল বিয়ে-শাদি, সভা-সেমিনার, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। থমকে আছে দেশের অন্য জেলার মতো যশোরের কমিউনিটি সেন্টারগুলোও। এতে মহা বিপাকে পড়েছে কমিউনিটি সেন্টার ব্যবসায়ীরা। একদিকে বন্ধ রয়েছে আয়, আর আরেকদিকে ফুরিয়ে আসছে জমানো টাকা। ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছরজুড়ে বুকিং দেয়া সবধরনের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। যেখানে দম ফেলার ফুরসত পেতেন না কর্মীরা, সেখানে এখন অলস ও বেকার হয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। বিপুল পরিমাণ এই ক্ষতির বোঝা সামলে ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোটা উঠেছে বড় চ্যালেঞ্জ!
জানা গেছে, ১৯ মার্চ করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সারা দেশে সব ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। যশোর জেলার আট উপজেলায় শতাধিক কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। জেলা মালিক সমিতির নির্দেশনা অনুয়ারী সব গুলোই বন্ধ রয়েছে। এই খাতের সাথে সম্পৃক্ত কর্মচারী রয়েছে দুই হাজারেরও বেশি শ্রমিক। করোনায় অনুষ্ঠান না হওয়ায় জীবিকার অনিশ্চয়তায় এ খাতের সাথে কমকর্তা-কর্মচারীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) বিকালে যশোর শহরের বিসমিল্লাহ কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, শূন্য বর কনের আসন, জ্বলছে না লাল-নীল বাতি। ধুলো জমেছে রান্নার হাড়ি পাতিলে। হলগুলোতে এখন সুনশান নীরবতা। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও, আবারও আগের মতো জমজমাট দিন ফিরবে কিনা; ক্ষতির মুখে এই ব্যবসায় থাকবেন কিনা এই নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
শহরের বিসমিল্লাহ কমিউনিটি সেন্টারের পরিচালক এহ্সানুল হক মনি জানান, করোনার জনসমাগম কমাতে আটকে আছে অনেক বিয়ে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে গত চার মাসে বিয়ে হচ্ছে অনেক কম। যেসব বিয়ে হচ্ছে তাতেও নেই আনন্দ। আগের মতো ধুমধাম করে, বাদ্য-যন্ত্র বাজিয়ে বিয়ে আর হচ্ছে না। একেবারেই সাদামাটা, বর ও কনে পক্ষের ক’জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। তাই দৌড়াতে হচ্ছে না কমিউনিটি সেন্টারে, ডেকোরেটর ভাড়াও নিতে হচ্ছে না। গত কয়েক মাসে তার প্রায় ১৫ থেকে ২০ টা অনুষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। সে হিসাবে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনুষ্ঠান বন্ধ থাকার মধ্যে কর্মচারীদের বেতন, ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। আয় নেই তার পরেও আমাদের ব্যয় হচ্ছে।
এ বিষয়ে চাইপাই রেস্টুরেন্ট পরিচালক ও জেলা কমিউনিটি মালিক সমিতির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান রুবেল বার্তা ২৪.কমকে বলেন, সরকার গণজমায়েতসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। কাস্টমারও আসে না। তাই গত ৪ মাস ধরেই সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ আছে। কমিউনিটি সেন্টারগুলো বন্ধ থাকায় এর সাথে সম্পৃক্ত মালিক কর্মচারীরা বড় ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। কাজ না থাকার পরেও তাদের সংসার চালানোর জন্য বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে যশোরের বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানান, করোনার প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা অনুয়ারী জেলার সকল কমিউনিটি সেন্টার ও গণজমায়েত বন্ধ করা হয়েছে। কমিউনিটি সেন্টারগুলো বন্ধ থাকায় মালিকদের বেশি ক্ষতি না হলেও শ্রমিকরা হয়েছেন কর্মহীন। সেকারণে জেলায় সকল কর্মহীন পরিবারের মাঝে জেলা প্রশাসন খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ প্রদান করেছে। যশোরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে চালু হলেও এখনো কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। দেশ স্বাভাবিক হলে ও সরকারি নির্দেশনা পেলেই কমিউনিটি সেন্টারগুলো চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।