মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে শিবচর উপজেলাসহ মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে নদী ভাঙনে বাড়ি, ঘর, স্থাপনা নদীতে বিলীন হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
শুক্রবার (২৪ জুলাই) বিকেলে শিবচরের চরাঞ্চলসহ সাবেক কিছু এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়। উপজেলা চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নসহ মোট ১৯টি ইউনিয়নই এখন পানিতে প্লাবিত। সেখানে হাজার হাজার লোক পানিবন্দি। বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ার ফলে লোকজন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করলেও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে তারা। কেউ গরু ছাগল এলাকার ব্রিজে রেখেছেন, কেউ আবার আত্মীয়র বাড়িতে রেখে আসছেন। এছাড়াও খাবার বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সংকট রয়েছে।
অন্যদিকে সরকারিভাবে ত্রাণ সরবরাহ করা হলে তা অপ্রতুল। কোথাও কোথাও আশ্রয় কেন্দ্রে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে জেলার বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। কোথাও কোথাও মানুষ চরম দুর্ভোগ ও মানবেতর জীবনযাপন করছে।
অন্যদিকে উপজেলার বাশকান্দি, বহেরাতল, ভান্ডারীকান্দি, ভদ্রাসনসহ সাবেক এলাকায়ও পানি বাড়ছে। এসব এলাকায় পানি বাড়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে। পানিতে তলিয়ে গগেছে হাট বাজার, রাস্তা ঘাট। তাছাড়া রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ রয়েছে।
জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় শিবচরের পদ্মায় পানি স্থিতিশীল ছিলো। তবে শুক্রবার বিকেল থেকে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শিবচরের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আড়িয়াল খাঁ নদে ৬ সে.মি. পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীব্র স্রোতে অব্যাহত থেকে নদী ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে ৭ ইউনিয়নে। এছাড়াও বিকেল থেকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পদ্মা ও আড়িয়ালখার তীরবর্তী উপজেলার বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ি, মাদবরেরচর, চরজানাজাত, সন্ন্যসিরচর শিরুয়াইল, নিলখী ইউনিয়নে নদী ভাঙন দেখা দিচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দরখোলা ইউনিয়নের নুরুদ্দিন মাদবরকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ভবনটির বৃহৎ অংশ বিলীন হয়। এছাড়াও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা
পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি সহযোগীতায় ৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় চারশত লোক বসবাস করছে। ইতোমধ্যেই ৩ শতাধিক পরিবার গবাদি পশু, মালামাল অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে কেউ কেউ আবার আশ্রয় কেন্দ্রই তাদের গবাদি পশু নিয়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়াও অনেক বাড়ি ঘর ভেঙে আশে পাশের গ্রামে ও উপজেলায় চলে যাচ্ছে।
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছের তীরবর্তী সন্ন্যাসীরচর, শিরুয়াইল, নিলখী ও বহেরাতলা দক্ষিণেও নদী ভাঙন দেখা দিয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ পর্যন্ত নদীতে বিলীন হয়েছে সাড়ে ৪ শতাধিক ঘরবাড়ি। এসব এলাকায় খোলা ২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং চালিয়ে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা না হলে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাগুলো দ্রুতে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় কালাম খান বলেন, বাড়িতে পানি উঠেছে। তাছাড়া যেকোনো সময় বাড়ি ভেঙে যেতে পারে। তাই অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছি।
বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বেপারী বলেন, গতকাল আমাদের এই এলাকার একটি হাই স্কুল নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও হুমকির মুখে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, প্রাইমারী স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক সহ সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা। যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে এগুলো রক্ষা করা যাবে বলে আমি মনে করি।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথেই উপজেলা প্রশাসন মাঠে কাজ করছে। আমরা লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র ওঠার ব্যবস্থা করছি। এছাড়াও জেলা প্রশাসন ও আমাদের চিফ হুইপ স্যার নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন।