ঈদুল আজহা মানেই পশু কোরবানি। আর পশু কোরবানির পর রাজধানীর বর্জ্য অপসারণ নিয়ে সব সময় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় সিটি করপোরেশনকে। এবার সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
ঈদুল আজহার আগেই কাউন্সিলর ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেন বলে জানান মেয়র আতিক। সেই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার (০১ আগস্ট) ঈদুল আজহার দিন বিকেল ২টার সময় ভাটার এলাকার সাইদনগরের বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কোরবানি বর্জ্য অপসারণের কাজ।
এরপর ডিএনসিসির প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে শুরু হয় বর্জ্য সংগ্রহের কাজ। ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পাশাপাশি অস্থায়ী কর্মীদের নিয়ে একযোগে মাঠে নামে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে। ঈদুল আজহায় কোরবানি বর্জ্য অপসারণে এরইমধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগের ঈদের ছুটি বাতিল করে মেয়র।
শুধু ঘোষণা দিয়ে বসে নেই মেয়র আতিক, বিকেল ২টার সময় বর্জ্য অপসারণ কাজের উদ্বোধন করে বিকেল ৫টায় মোহাম্মদপুর টাউনহল এলাকা থেকে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শন শুরু করেন মেয়র। এরপর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে চলে যান মিরপুর। সেখানে মিরপুর-২, মিরপুর-৬, মিরপুর-৭ এবং মিরপুর-৮ এলাকার অলিগলি পরিদর্শন করেন মেয়র।
সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মিরপুর এলাকা পরিদর্শন করে সেখান থেকে চলে যান রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়। সরেজমিনে ঘুরে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজ দেখেন এবং কোথাও কোথাও পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীদের নির্দেশনা দেন দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজধানীকে ঝকঝকে চকচকে করতে।
মিরপুর-৬ এলাকার সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন এলাকায় গিয়ে সেখানে মিরপুর স্টেডিয়াম থেকে মিরপুর-১১ যেতে রাস্তার পশ্চিম পাশের একপাশ বন্ধ করে বর্জ্য সলটিং করার কাজ দেখেন মেয়র। এসময় তিনি বলেন, এভাবে রাস্তা বন্ধ করে কেন বর্জ্য সলটিং করা হচ্ছে। জবাবে ওই অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, এখানে কোনো এসটিএস নেই, আর এই এলাকার বর্জ্য সংগ্রহ করে রাখারও জায়গা নেই। এসময় মেয়র বলেন, এখানে এতো সুন্দর একটি আবাসিক এলাকা করা হলো অথচ সেখানে বর্জ্য রাখার জন্য কোনো জায়গা নেই। এটা মানা যায় না।
,
মেয়র তাৎক্ষণিক নির্দেশন দেন অফিস খোলা মাত্র গণপূর্ত অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হবে তাদের আবাসিক এলাকা থেকে যে বর্জ্য আসবে সেগুলো সলটিং এর জন্য জায়গা রাখা হয়নি কেন? তারা যদি জায়গা না দেয় আমরা তাদের বর্জ্য সংগ্রহ করব না।
এরপর মেয়র মিরপুর-৭ নং এলাকায় গিয়ে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেন। মেয়র জানতে চান কোরবানির বর্জ্য অপসারণ নিয়ে আপনাদের কোনো অভিযোগ আছে? জবাবে স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, এবার অনেক সুন্দর কাজ হয়েছে, সন্ধ্যার আগেই আমাদের এলাকার প্রতিটি গলি ঝকঝকে হয়ে গেছে।
এদিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে মোহাম্মদপুরের শেরশাহসুরি রোড, তাজমহল রোড, শ্যামলী রিং রোড, মিরপুর-২ স্টেডিয়াম রোডের আশাপাশের গলি, মিরপুর-৬ এবং আশপাশের প্রতিটি গলি থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। যেখানে পশু জবাই করা হয়েছে সেখানে পানি দিয়ে ধুয়ে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছে।
তবে কোথাও কোথাও এখানো বর্জ্য পুরোপুরি অপসারণ করা হয়নি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা বলেন আজ সারারাত আমাদের কাজ করতে হবে। রাতের মধ্যেই দেখবেন সব বর্জ্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাজধানীবাসী দেখবে চকচকা শহর।
এবিষয়ে মেয়র বলেন, কোরবানি যেহেতু তিনদিন ব্যাপী হয়, তাই কোনো গলি একবার পরিষ্কার করলে আবার কালকেও কোরবানি হতে পারে সেখান থেকে আবার বর্জ্য তৈরি হতে পারে। তাই আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় বলেছি। তবে তার অনেক আগেই ঢাকা ঝকঝকে, চকচকে হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর সিটি বর্জ্যমুক্ত হবে: ডিএনসিসির মেয়র