যেভাবে কাটলো জামালপুরের বন্যার্তদের ঈদ

, জাতীয়

সাহিদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, জামালপুর | 2023-08-16 03:39:16

ঈদের আনন্দ নেই জামালপুরের বন্যা কবলিত মানুষদের। বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় তারা ব্যস্ত ঘরবাড়ি মেরামত করতে। বন্যার্ত এলাকায় কোরবানি বা নতুন জামা দূরের কথা, অনেকের ঘরে খাবারের ব্যবস্থাই নেই। অপর দিকে ইসলামপুর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের যমুনার নদীর ওপারে শুরু হয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙন। এতে চোখের পলকে নিঃস্ব হচ্ছে নদীর তীরের মানুষ।

জানা গেছে, একদিকে করোনা পরিস্থিতি আরেক দিকে চারপাশে বন্যার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মহীন অবস্থায় অনেকেই খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছেন। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই পেয়েছেন তাদেরও ঈদের আমেজ নেই। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকটও দেখা দিয়েছে। তাই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন এসব এলাকার অনেক বাসিন্দা। পানিবন্দি ও ভয়াবহ নদী ভাঙনের ফলে এবার ঈদের আনন্দ পানিতেই ভেসে গেছে।

ঈদের দিন শনিবার (১ আগস্ট) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জামালপুরের ইসলামপুরের গিলাবাড়ী, গুনাপাড়া,দক্ষিণ গুনাপাড়া, বড়দেলিপাড়, বাবনা, পশ্চিম বাবনা এলাকার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, পানিবন্দি ও বাঁধে আশ্রয় নেয়া নিম্ন আয়ের মানুষ খাবার সংকটে পড়েছেন।

তাদের অভিযোগ কর্মহীন অবস্থায় এক মাস অতিবাহিত করলেও মাত্র ৮/১০ কেজি চাল ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন তারা। আবার অনেক পরিবারের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। এসব পরিবারকে এক বেলা খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। এদিকে গত চার দিন থেকে যমুনার পানি কমলেও ঈদের দিন থেকে পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে।

দক্ষিণগিলা বাড়ি এলাকার সোনা মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'পানির মধ্যে কিভাবে আমরা ঈদটা করি, ঘর থ্যাইকা বারাইলে পানি। এতদিন ঘরে এক কোমর পানি ছিল। চেয়ারম্যান একদিন আসিয়া দেখবোতো আমরা কি অবস্থায় আছি। এড়া মানুষতো পাঠাবো তাওতো পাঠাইনি। তাহলে আমরা কিভাবে বাঁচমু? এড়া কামলা ময়ঠা দিতে পারি না বন্যা মদেও'।

পানিবন্দি ও ভয়াবহ নদী ভাঙনের ফলে এবার ঈদের আনন্দ পানিতেই ভেসে গেছে

দক্ষিণ গিলা বাড়ি এলাকার আছিয়া বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'ঈদের দিনতো খালি ছবি তুলে নিতে আসছেন, আরতো কিছু দিয়ে যান না। নি আসে ভরে গেইলগ্যা ঈদের দিন আমরা এখন কি করি। গরু খালি চেয়ারম্যান মেম্বারদেরই দিবেন আমরা এখন না খেয়ে মরি। সুমানে পানি আছে বাইত, আমগরে মারবেন লাগছেন আপনেরা আর কি দিবেন। এতদিন রাস্তায় আছিলাম, ঈদের একটা দিন বছরকার একটা দিন বাড়িতে খাকমু এই যে আবার পানি আসছে'।

বেলগাছার গুনাপাড়ার বৃদ্ধা ছহিনা বেওয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'এমন একটা ঈদ গেলো, একটা কাপড়-চোপড়ও পাই নাই। খাদ্যও পাই নাই। সহালে মাইসের বাড়িতে এল্লাহানি সেমাই খেয়ে সারাদিন পার করছি'।

এদিকে গত চারদিন ধরে পানি কমলেও ঈদের দিন (শনিবার) থেকে যমুনার পানি বাড়া শুরু করেছে। গত ২৪ঘন্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার যমুনার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কোনো ঈদ উপহার জোটেনি ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের ভাগ্যে

রোববার (২ আগস্ট) দুপুরে বার্তা২৪.কমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, গতকাল থেকে আবারো যমুনা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে এবার বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে।

জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো.নায়েব আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, জেলায় বন্যাদুর্গতদের মাঝে ৭১০ মেট্রিক টন চাল, ২৭ লাখ নগদ টাকা, শিশু খাদ্য বাবদ চার লাখ এবং গো-খাদ্য বাবদ ১২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে নিয়মিতভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর