মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় কোরবানির পশুর চামড়া কোনও ফড়িয়া কিনতে না আসায় বাধ্য হয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন। জেলার গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই একই তথ্য পাওয়া গেছে।
যুগ যুগ ধরে কোরবানির পশুর চামড়ার বিক্রির টাকা সাধারণত গরীব এতিমদের মধ্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে। শহরে পশুর চামড়া বিক্রি করতে পারলেও জেলার গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ কোরবানির পশুর চামড়া কেউই বিক্রি করতে পারেননি। এমনকি কোরবানির ছাগলের চামড়ার বেলায়ও এই অবস্থা দেখা গেছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বর্ষিজোড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. হেলু মিয়া জানান, তিনি কোরবানির জন্য ৮২, ৬৭ ও ৬৬ হাজার টাকা দামের তিনটি গরু ছিল। কিন্তু এসব পশুর চামড়া কেউ কিনতে আসেনি। গ্রামের কেউ কেউ ৩০ টাকা করে গরু বিক্রি করেছেন। আবার কেউ মাদরাসায় দান করেন। ছাগলের চামড়া দুই-তিন টাকা দাম উঠেছে।
কোরবানির গরু ও খাসির শত শত পিস চামড়া পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশনে মাটিতে পুঁতে রাখার ও কোরবানির চামড়া বস্তায় ভর্তি করে নদীতে ফেলার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা গেছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের পশ্চিম লইয়ারকুল গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী দুলাল মিয়া জানান, ৭০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি একটি কোরবানির পশু ক্রয় করেছিলেন। ঈদের দিনে পশুটি কোরবানি দেয়ার পর কেউ আর চামড়া কিনতে আসেনি। অপেক্ষার পর ওইদিন সন্ধ্যার দিকে বাড়ির পাশে কৃষি জমিতে পুঁতে রাখেন।
একই গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল গফুরের ৫০ হাজার টাকার দামের গরুর চামড়াও বিক্রি করতে পারেন নি। তিনিও মাটিতে পুঁতে রাখেন। একই গ্রামের আব্দুস সালামের ৫৫ হাজার টাকা দামের গরু, ইছুব উল্যার ৫০ হাজার টাকার দামের গরুর চামড়া বিক্রি করতে না পারায় মাটিতে পুঁতে রাখেন।
পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা নিউইয়র্ক প্রবাসী মো.মন্তাজ আলী ও প্রবাসে বসবাসরত তার পরিবারের সদস্যরা মিলে ঈদের দিনে তিন লাখ টাকা দামে দুটি গরু ও পনেরও হাজার টাকা দামের দুটি ছাগল কোরবানি দেন। সারাদিন পরেও সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ পশুর চামড়া কিনতে না আসায় পাশের বাড়ির লোকদের দিয়ে মাটিতে চাপা দেন।
একই গ্রামের ব্যবসায়ী কাজী গোলাম কিবরিয়া জুয়েল জানান, তিনি ৬৫ হাজার টাকা দামের একটি গরু ক্রয় করে কোরবানি দেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত কারও কাছে বিক্রি করতে না পারায় উপায়ান্তর না দেখে পরে মটি চাপা দেন।
শহরের সিন্দুর খান সড়কের বাসিন্দা কলামিস্ট মাওলানা এহসান বিন মুজাহির জানান, ৪০ থেকে ৯০ হাজার টাকা দামের কোরবানির পশুর চামড়া শহর এলাকায় ৪০ থেকে ৬০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। আর ছাগলের চামড়া পানিতে ফেলে দেয় ও গর্তে পুঁতে রাখে। মাদরাসার চামড়াগুলো ৭০ দরে বিক্রি করেছে। তিনি বলেন, সরকার ইচ্ছে করলে ভর্তুকি দিয়ে চামড়া কিনতে পারতো।
চামড়া ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ঈদুল আজহায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৭০ হাজারের বেশি গবাদিপশু কোরবানি দেয়া হয়। এর মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ হাজার গরু ও বাকি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার অন্যান্য গবাদিপশু।
অথচ ক্রেতা না পাওয়ায়, প্রচণ্ড গরমে লবণ ও শ্রমিক সংকটে মৌলভীবাজারে কোরবানির গরু ও খাসির শত শত পিস চামড়া ব্যবসায়ীরা নদীতে ফেলে দিয়েছেন। প্রচুর অবিক্রিত খাসির চামড়া পৌরসভার ড্রাম্পিং স্টেশনে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মাসুদার রহমান জানিয়েছেন, এবারের ঈদে জেলায় গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ মিলিয়ে মোট ৮১ হাজার ১৫১টি পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় (৯৫ হাজার ২৭৬টি) অনেক কম। তিনি জানান, কোরবানির ঈদের আগে জেলার ২২টি স্থায়ী ও ১০টি অস্থায়ী হাটে প্রায় ২০ হাজার লিফলেট ছাপিয়ে বিতরণ করেছি। এখনও দেখি অনেক এলাকায় পশুর চামড়া বিক্রিও করতে পারেনি। তাহলে কী লাভ হলো।