‘১৫ আগস্টের ঘটনায় জিয়াকে জড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে সরকার’

বিএনপি, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-28 08:33:22

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে জড়ানোর জন্য সরকার নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, যে ব্যক্তিটি জাতীয় নেতৃত্বের অভাবে দুর্যোগময় মুহূর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। জাতীয় নেতৃত্ব সেদিন যে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি একজন মেজর হিসেবে সেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জাতির কাণ্ডারি হিসেবে তিনি ভূমিকা পালন করেছিলেন। আজকে তার বিরুদ্ধে সমস্ত মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে মিডিয়ার সমস্ত আলো একজন ব্যক্তির দিকে টেনে নিয়ে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিষোদগার করছেন।

সোমবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম আয়োজিত মরহুম ড. এমাজউদ্দিন আহমেদের স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিয়ে রিজভী বলেন, ১৫ আগস্ট মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু নিয়ে আপনারা যে মামলা করেছিলেন সেই মামলাতেও তো শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম ছিল না। তিনি তো তখন সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন। প্রথম ব্যক্তি যিনি তার কোনো দায়দায়িত্ব নেই। কারণ তিনি আওয়ামী লীগ করেন, আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ছিলেন বলে তিনি বাদ। বহুদলীয় গণতন্ত্র জিয়াউর রহমান চালু করেছিলেন এটাই ছিল তার অপরাধ। তিনি যদি বাকশালকে সাপোর্ট করতেন তাহলে এ ধরনের কোনো কথাই আসতে না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের এই গর্বিত সন্তান সেক্টর কমান্ডার ও তার রাজনৈতিক দর্শন এবং তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শুধু বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিতকরণে নয় উৎপাদন উন্নয়নের রাজনীতি এবং বাংলাদেশ যে একটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র এটা জনগণ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন জিয়াউর রহমানের সময়। এখানেই কষ্ট আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের নেত্রীর। তার এতো জনপ্রিয়তা কেন? তার রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং বহুদলীয় যে চেতনা এখানে প্রতিষ্ঠা করেছে এটাই তাদের কষ্ট। তাকে হত্যা করা হলো চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে। জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর সেই পতাকাটি বহন করলেন তার সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। এই কারণেই সমস্ত প্রতিহিংসা জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার ওপরে। এই যে কমিটমেন্ট গণতন্ত্রের, শেখ হাসিনার চেয়ে গণতন্ত্রের কমিটমেন্ট বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন চ্যাম্পিয়ন। যখন শেখ হাসিনা ধরা পড়ল যে সে কথা দিয়ে কথা রাখে না এবং তার রাজনীতিটাই হচ্ছে কথা দিয়ে কথা না রাখা। মানুষের সাথে একটা প্রতারণার জায়গা তিনি তৈরি করেছে। আর বেগম খালেদা জিয়ার কথার সাথে কাজের মিল রয়েছে। যেটা অঙ্গীকার করেন অঙ্গীকার থেকে বিচ্যুত হন না। আজকে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে যুক্ত করতে চাচ্ছে ১৫ আগস্টের সাথে। খন্দকার মোশতাক বাকশালের প্রভাবশালী নেতা ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা তিনি রাষ্ট্রপতি হলেন পাশাপাশি ক্যাবিনেট পার্লামেন্ট সবই আওয়ামী লীগের তাদেরকে তো আপনি তেমন কিছু বললেন না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ৭২ থেকে ৭৫ ক্যাবিনেটে আব্দুল মান্নান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মুশতাকের ক্যাবিনেট মন্ত্রী ছিলেন। তারপরেও বিভিন্ন আমলা ও সামরিক কর্মকর্তারা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। সে সময় তারা চাকরি করেছেন তারপরে আপনার আওয়ামী লীগের এমপি হয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। তাদেরকে তো কিছু বলেন না। ওই রক্তাক্ত লাশ নিয়ে শপথ পড়ালেন তিনি এখন উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। কই তাকে তো কিছু বলছেন না। আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ একটি মিছিল বের করতে পারিনি সেদিন।

তিনি বলেন, দেশে প্রথম সুশাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তার সময়ে দেশের মানুষ ঘরের দরজা খুলে ঘুমাতে পারতো। আর আপনার শাসন কি আপনার শাসন হচ্ছে ক্যাসিনো, আপনার শাসন হচ্ছে জেকেজি রিজেন্ট সাহেদ, সাবরিনা। কারণ যখনই দুর্বৃত্তের বৈশিষ্ট্য দ্বারা শাসন দেখাবে তখন গণতন্ত্র থাকবে না।

ড. এমাজউদ্দীনের মৃত্যুতে সরকার শোকবাণী না দেওয়ায় ছোট হয়েছে মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রফেসর এমাজউদ্দিনের ছাত্র শুধু বিএনপি নয় আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য দলের রয়েছে। শোকবাণী না দিয়ে তারা কি বড় হয়েছেন না তারা বড় হননি। তিনি তো রাজনৈতিক মতবাদের উর্দ্ধে সবার ওপরে। তিনি ছিলেন শিক্ষক, এই অভিভাবকের ছোঁয়া যারা পেয়েছেন তারাই শুধু বলতে পারবেন তিনি কেমন মানুষ ছিলেন। আমরা আজকে এমন সংকীর্ণতায় ভুগছি যে এই রকম একজন মহিরুহের মৃত্যুতে আমরা শোকবাণী পর্যন্ত দিতে পারছি না।

আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. সুকুমাল বড়ুয়া, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আবদুল লতিফ মাসুম, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিলকিস ইসলাম প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর