খালেদা-তারেকের ঐতিহাসিক ভুল

বিএনপি, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 14:57:12

যে ভুল করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সেই একই ভুল করলেন তারেক রহমান। মানুষ চেনার ভুল আরেকবার বিপদে ফেলতে যাচ্ছে বিএনপিকে। ঐতিহাসিক ভুলের পথ থেকে খালেদা-তারেক বের হতে পারেননি।

নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান করে ক্ষমতায় এসেছিলেন খালেদা জিয়া একদল তরুণ ও অচেনা নেতা-কর্মীকে নিয়ে। কারণ তার দলের বাঘা বাঘা নেতারা এরশাদের দলে ভিড়ে গিয়েছিল তাকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় রেখে। ধ্বংসস্তূপ থেকে বিএনপির নতুন জনশক্তিকে সঙ্গে নিয়ে খালেদা ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে যান। তারপরেই করেন ঐতিহাসিক ভুলগুলো। এরশাদের উপ-রাষ্ট্রপতি মওদুদ আহমেদসহ স্রোতের মতো নেতারা ক্ষমতাসীন বিএনপিতে আসতে থাকে। ত্যাগী ও সংগ্রামীরা তখন হয়ে পড়েন ব্রাত্য ও কোণঠাসা।

তারপর বিএনপির ইতিহাস স্তাবকতা ও পতনের কাল। খালেদা জিয়া, যার ডাক নাম পুতুল, তাকে পুতুলের মতো সাজিয়ে রেখে এরশাদের সঙ্গে লুটের অভিজ্ঞতাবাহী নেতারা দলের বারোটা বাজায়। তারেকের উত্থানকে সঠিক পথে না নিয়ে নষ্ট পথে চালিত করে। রাজনীতি ও প্রশাসনের রন্ধে রন্ধে অনুপ্রবেশকারী এইসব দুর্নীতিবাজ ও অসৎ নেতৃত্ব জনপ্রিয় দল বিএনপির চরম সর্বনাশ করে।

১/১১-এর পর বিএনপির ‘দুধের মাছি’রা উড়ে গিয়েছিল। একদল ত্যাগী নেতা-কর্মী তখনও তিলে তিলে দল ও রাজনীতি ধরে রাখেন। তারা ছিল ছাত্রদল থেকে আসা বিএনপির পরীক্ষিত জাতীয়তাবাদী শক্তি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবার দলছুট ও আদর্শহীনদের দলে এনে জাতীয়তাবাদের বিশ্বস্ত শক্তিকে কোণঠাসা করা হলো। নব্বই দশকে বেগম জিয়া লোক চিনতে যে ভুল করেছিলেন, এবার একই ভুল করলেন তার উত্তরাধিকার তারেক রহমান।

ফলে নির্বাচনের মনোনয়ন বঞ্চিত হলেন ত্যাগী ও সংগ্রামীরা। ব্যারিস্টার অসীম, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, রাকিবুল ইসলাম বকুল এমন কয়েকজন ছাড়া মনোনয়ন পায়নি শত শত নিপীড়িত নেতা। অথচ তাদের হাতেই দলের আন্দোলনের মূল সুতাটি রয়েছে। কিশোরগঞ্জ-২ আসনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা শহীদুজ্জামান কাকন বিপদের দিনে দল ধরে রাখেন। সেখানে আনা হয় বহুল আলোচিত মেজর রঞ্জনকে। মেজরের চরমপন্থী অতীত বক্তব্য, কলাম ও টক শো শোনার পর খালেদাপন্থী বিএনপির নেতা-কর্মীরা কতটুকু খোলা মনে তাকে ভোট দিতে পারেবে? এমন অনুপ্রবেশ একটি নয়, অসংখ্য।

বিএনপির ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বাইরের কিছু লোক, যারা বিএনপির রাজনীতির চরম বিরোধিতায় জীবন কাটিয়ে বয়সের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছেন। মান্না, কাদের সিদ্দিকী, সুলতান মনসুর, আসম রব, গোলাম মাওলা রনি ইত্যাদি বাইরের লোক বিএনপির রাজনীতি ও আদর্শের জন্য আদৌ কোনো উপকার বয়ে আনবে কিনা, সেটাই বিরাট প্রশ্ন। সারা জীবন যারা ব্যক্তি স্বার্থ ও সুবিধার রাজনীতি করেছে, তারা আদর্শের রাজনীতির কোন সবকটি বিএনপিকে দেবেন, সেটা ভোটের পর পরই টের পাওয়া যাবে। বিএনপির ভোটগুলো কব্জা করে এদের ব্যক্তিগত উপকার হলেও কারাবন্দি খালেদা বা ফেরারী তারেকের মোটেও লাভ হবে না। রাজনীতি থেকে রিটায়ার্ড ও আইন পেশায় অতিবৃদ্ধ একজনকে ভর করে বিএনপি তার মূল শক্তি ও আস্থার লোকগুলোকে বিপদে ফেলে দলের আদর্শিক রাজনীতির চরম বিপদ ডেকে এনেছে।

মানুষ চেনার যে ভুল খালেদা করে বিরাট মাশুল দিয়েছেন, একই ভুল তারেকও করলেন। এখন দেখার বিষয় এই ভুলের মাশুল হিসাবে বিএনপির মতো বিপুল জনসমর্থিত রাজনৈতিক দলটিকে আর কত ক্ষয়-ক্ষতি ও বিপদের বোঝা টানতে হয়!

এ সম্পর্কিত আরও খবর