বিএনপির রাজনীতিতে রহস্য পুরুষ আব্দুল আউয়াল মিন্টু

বিএনপি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 22:51:56

আবদুল আউয়াল মিন্টু বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছে এক রহস্যময় নাম। বিএনপির অনেকেই তাকে দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের চর বলে মনে করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েও শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ায় সেই গুঞ্জনে নতুনমাত্রা পেয়েছে। নানা মেরুকরণ মেলানোর চেষ্টা করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

নির্বাচনে আবদুল আউয়াল মিন্টু হঠাৎ ইউটার্ণ এবারই প্রথম না। এর আগেও তিনি বিএনপির সঙ্গে একই খেলা খেলেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে তার প্রার্থী হওয়ার কথা। দীর্ঘদিন ধরে তাকে ঘিরে চলে ক্যাম্পেইন, তিনিও মাঠে ছিলেন। কিন্তু আজানা (!) ভুলের কারণে তার নমিনেশন পেপার বাতিল হয়ে যায়। তবে আশ্চর্জজনকভাবে মনোনয়ন টিকে যার তার ছেলে তাবিথ আউয়ালেরটা। ওই ভুলের ঘটনাকে অনেকেই ইচ্ছাকৃত বলে সমালোচনা করতেন। কিন্তু সব কথাকেই গুজব বলে উড়িয়ে দিতেন।

কিন্তু এবার যেনো আরও তীরে এনে বিএনপিকে তলিয়ে দিয়েছেন দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা এই নেতা। এবার আর মনোনয়নপত্রে ভুল নয়, মনোনয়ন জমা দিতেই যাননি। এমনকি দলকেই কোনো রকম তথ্য আগে থেকে জানাননি। বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত ফেনীতে একমাত্র প্রভাবশালী নেতা ছিলেন তিনি। কিন্তু তার এই হঠাৎ বসে যাওয়া অপুরণীয় ক্ষতি হলো- বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা। আর তার এই নাটকীয়তায় নানা রকম মুখরোচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে রাজনীতির মাঠে।

অনেকে বলছেন, দীর্ঘ ২০ বছর আওয়ামী লীগ করেছেন। এখনও তার আওয়ামী লীগের সঙ্গে গাটছড়া রয়েছে। আবার আত্মীয়তার সুত্রেও রয়েছে গভীর যোগসূত্র। ছোট ছেলে তাফসির বিয়ে করেছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা গওহর রিজভীর মেয়েকে।

আত্মীয়তার চেয়ে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ে আলোচনায় ঠাঁই পেয়েছে তা হচ্ছে- আওয়ামী লীগের সময়ে তার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির অন্য নেতারা যখন পালিয়ে বাঁচতে পারছেন না। তখন মিন্টুর ব্যবসা যেন জোয়ারের পানির মতো ফুলে ফেঁপে উঠেছে।

২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসায় তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। অনেকে মনে করেছেন বিএনপির রোষানল থেকে বাঁচতে খোলস বদলে দলে যোগ দিলেও মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগই থেকে গেছেন। সব সময় দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছেন। যে কারণে আওয়ামী লীগ তাকে পেছন থেকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।

আবার তার ছেলে তাবিথ আউয়ালের বাফুফের সহ-সভাপতি পদ নিয়েও রয়েছে নানা রকম কানাঘুষা। বিএনপির নেতাকর্মীদের যখন বিভিন্ন পদ থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে দিচ্ছে। সিটি করপোরেশনে জিতলেও অনেক মেয়রকে চেয়ারে বসতে দেয়নি আওয়ামী লীগ। ক্রীড়াঙ্গনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যদলের লোক খোঁজার জন্য বাটি চালান দিতে হয়। কিন্তু তাবিথের চিত্র পুরাই ভিন্ন। আয়েশের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

গত কয়েক বছরে নতুন করে ১৭টি নতুন ব্যবসা খুলেছেন। এটাকে সপ্তম আশ্চর্যের মতো মনে করছেন বিএনপির ব্যবসায়ীরা। বিএনপিপন্থী বলে পরিচিত এক লোক তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘চিন্তা করা যায় , এই বাকশালী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী আমলে বিএনপি ব্যাবসায়ীর এ রকম শনৈ শনৈ উন্নতি ????!!!!! তার উপর এই পরিবারের সব ব্যবসা লাভজনক!!! যমুনা রিসোর্ট কয়েক কোটি টাকা দিয়ে এই আওয়ামী লীগের আমলেই লিজ নেন আবদুল আউয়াল মিন্টু।’

দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা, আওয়ামী লীগ আমলে নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা কার। আবার ঠিক মনোনয়ন দাখিলেরে পূর্বে হঠাৎ করে ডুব মারা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে বিএনপি নেতাদের।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অনেকবার ফোন দিলেও সাড়া দেননি আবদুল আউয়াল মিন্টু। এমনকি এসএমএসেরও উত্তর দেননি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর