খালেদা জিয়াই ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী!

বিএনপি, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 13:00:48

কে হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী! সরকার বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে মূল নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে? কে হবেন প্রধানমন্ত্রী? অস্পষ্ট এ প্রশ্নের উত্তরটি জানার আগ্রহ আন্তর্জাতিক মহল, ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিক, দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দল, এমনকি সাধারণ জনগণেরও।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট না করলেও সম্প্রতি ঐক্যফ্রন্টের নীতিনির্ধারণী বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই হবে প্রধানমন্ত্রী এমন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে ড. কামাল ও তারেক রহমানকে নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও তারা ভোটে না থাকায়  এখন আর গুঞ্জনেরেও অবকাশ নেই। ফলে ঐক্যফ্রন্ট জিতলে খালেদা জিয়াই হবেন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।

তবে খালেদা জিয়া একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি আছেন। একটি মামলায় ১৫ বছর আরেক মামলায় ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি তিনি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব মামলায় সাজা কাটিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ যেখানে অনিশ্চিত সেখানে মুক্ত খালেদাকে নির্বাচনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বানানোর চিন্তা আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। যদিও ইতোমধ্যে ফেনী ১, বগুড়া ৬ এবং ৭ আসনে দলের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বাতিল, কারামুক্তি লাভ, নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়াকে অনিশ্চিত বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়াটা উচ্চ আদালতের ব্যাপার। আপিল ডিভিশন যদি উনাকে জামিন দেয় তাহলে উনি জামিন পাবেন। এবং যদি বলে উনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন তাহলে তো নির্বাচন করতে পারবেন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার দল যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ খোলা থাকবে। কিন্তু এটা এখনও অনেক অনিশ্চিত। তিনি জামিন পাবেন কিনা সেটা অনিশ্চিত, দণ্ড স্থগিত হবে কিনা সেটা অনিশ্চিত, উনার দল জিতবে কিনা কিংবা জিততে দেয়া হবে কিনা সেটাও অনিশ্চিত। এতগুলো অনিশ্চিয়তা যদি দুর করা যায় তাহলে উনার প্রধানমন্ত্রী হবার চান্স থাকবে। তবে সে সম্ভাবনা কম। এতো গুলো অনিশ্চিয়তা দুর হবে সে সম্ভাবনা কম বলেই মনে হয়।    

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, সম্প্রতি রাজধানীর গুলশান হোটেল লেকশোরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কূটনীতিকদের বৈঠকে ড. কামালের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের কাছে জানতে চাওয়া হয় সরকার বিরোধী এই জোট ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? এর কিছুদিন পরেই একই হোটেলে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোর অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রশ্নটির পুনরাবৃত্তি হয়। কে হবেন প্রধানমন্ত্রী?

এছাড়াও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তুলে জানতে চেয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী কে থাকবেন? বিভিন্ন মহলের এই প্রশ্ন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এমনকি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। এর পরপরই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নীতিনির্ধারণী বৈঠকে আলোচনা শুরু হয় আলোচিত এই প্রশ্নটি নিয়ে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকের প্রথম পর্যায়ে তাদের ঐক্যমত ছিল খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় আসলে ড. কামালই হবেন নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বিএনপির নীতিনির্ধারক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য নেতাদের মাঝে মতানৈক্য তৈরি হলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামটি প্রস্তাবনায় আসে। কিন্তু তারা দুজন ভোটে না থাকায় এখন সে আলোচনারও অবকাশ নেই।

এরপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিদ্ধান্তে আসে, যে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনের প্রেক্ষাপট এবং পরিস্থিতি ঐক্যফ্রন্টের অনুকুলে থাকলে এবং বিজয়ের পাল্লা ভারি থাকলে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসে।

এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা। এছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বার্তা২৪.কমকে জানান, সব বিষয় বলা ঠিক হবে না। যেহেতু ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আছি তাই অপেক্ষা করুন কিছুদিনের মধ্যে সবকিছু স্পষ্ট হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি যেহেতু আদালতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে তাই শেষ পর্য‌ন্ত দেখতে চাই কি ঘটে। খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে যে অনেকের স্বপ্ন বুমেরাং হবে এটা নিশ্চিত।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, অবশ্যই পারবেন, কেন পারবেন না। তিনি নির্বাচন করতে পারবেন বলেই তো মনোনয়ন পত্র দাখিল করা হয়েছে। অপেক্ষা করেন না কি হয়। আইনী প্রক্রিয়া আমরা গ্রহণ করেছি, অপেক্ষা করেন। 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আযম খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা এখনও আশাবাদি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে মুক্ত হবেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।

দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি বলেন, নির্বাচনটা যেহেতু আন্দোলন তাই সেই আন্দোলনের মাধ্যম খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন এবং তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী।যদিও খালেদা  জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে সরকারের উপর নির্ভর করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর