বিএনপির সাবেক নেতার নেতৃত্বে নতুন দল, ভিড়তে চায় মহাজোটে

বিবিধ, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো | 2023-10-15 14:35:09

রাজনীতিতে ‘ভদ্রলোকদের’ ফেরাতে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক বিএনপি নেতা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি নাজিম উদ্দিন। এই দলের সদস্যসচিবও তারই ক্যাম্পাস রাজনীতির সহযোদ্ধা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট থেকে চাকসুর জিএস নির্বাচিত হওয়া আজিম উদ্দিন।

রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম’ নামের এই দলের ঘোষণা দেন দুই নেতা।

নতুন দল ঘোষণার পর পরই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নিজেদের অবস্থানও পরিষ্কার করেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের দুই নেতা। সদস্য সচিব আজিম উদ্দিন নিজেদের দলকে কোনো ‘কিংস পার্টি’ নয় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করব। কিন্তু এখন নিবন্ধন বন্ধ। আমরা আসলে যা করব, সেটি হলো-আমরা মহাজোটের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা করতে পারি। আলোচনার ভিত্তিতে আমরা নিবন্ধিত কোনো একটা রাজনৈতিক দলের মার্কা (প্রতীক) নিয়ে নির্বাচন করব।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, আমি অনেকদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে নেই। বিএনপির রাজনীতিতে তেমন একটা সক্রিয়ও ছিলাম না। আমি আর আজিম উদ্দিন বহুদিন ধরে সারা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগাযোগ করে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ করে সেখানে যাদের অতীত রাজনীতিতে গৌরবোজ্জল ভূমিকা আছে তাদের আমাদের সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিলাম। অবশেষে নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন দলের যাত্রা শুরু করব। যেহেতু আমাদের এটি একটা নতুন দল। দেশে গণতান্ত্রিক নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করাই আমাদের লক্ষ্য।

প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামে কারা কারা যুক্ত হয়েছেন জানতে চাইলে নাজিম উদ্দিন বলেন, সারাদেশের ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিরা অনেকেই আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন বিভিন্ন পেশাজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী। দেশে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের সামনে রেখে আমাদের এই দলের আত্মপ্রকাশ।

প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনের পর ঢাকায় কনভেনশন হবে বলে জানিয়েছেন নবগঠিত দলটির চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, সেখানে ১০১ সদস্যর কমিটির ঘোষণা করা হবে। কমিটিতে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আরিফ মঈন উদ্দিন রয়েছেন। আরও বেশ কিছু চমক থাকবে। এর মধ্যেই আমাদের অন্তত ১০০ জন প্রার্থী পাওয়া গেছে। অনেক আসনে একাধিক প্রার্থীও আছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন সংগঠনের সদস্য সচিব আজিম উদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমরা যখন আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি তখন দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একটা অনিশ্চিত অভিযাত্রা লক্ষ্য করছি। জাতি দু'ভাবে বিভক্ত কেউ পরিষ্কার জানে না কি হতে চলছে নির্বাচন হবে কি না? বিরোধীদল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না? দেশের অর্থনীতি সচল থাকবে কি না? মেগা প্রজেক্টগুলো অব্যাহত থাকবে কি না? দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হবে কি না? নানা প্রশ্ন জনগণের মনে উঁকি দিচ্ছে। চরম এক অনিশ্চতায় দেশের জনগণ। এদিকে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই দেশি- বিদেশি নানা গ্রুপ-গোষ্ঠী তৎপর। নানান এজেন্ডা নিয়ে প্রত্যেকেই যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে তৎপর।

বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে অভিযোগ করে আজিম উদ্দিন বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব-আমেরিকা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ভারত, চীনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র আমাদের ওপর চাপ তৈরি করছে। স্যাংশনের ভয় দেখিয়ে কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির করার কথা বলছে। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে, সেটা আমাদের দেশের জনগণই ঠিক করতে পারে, বিদেশিরা নয়। আমরা সন্দিহান, এসব রাষ্ট্রসমূহের এসব তৎপরতা ও দৌড়ঝাঁপ নিয়ে। আমরা মনে করি, তাদের এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে রয়েছে তাদের স্বার্থ ও ভৌগোলিক আধিপত্য বিস্তারের নীলনকশা।

দেশে কোনো সাংঘর্ষিক রাজনীতি চান না জানিয়ে আজিম উদ্দিন বরেন, ভাঙচুর, গাড়ি পোড়ানো, মানুষ হত্যা, হরতাল অবরোধ রাজনীতির কোনো ভাষা হতে পারে না। আমরা দেখেছি, অতীতেও সাংঘর্ষিক রাজনীতি দেশের কোনো কল্যাণ বয়ে আনেনি। ইদানিং দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষ বেশ তৎপর। এর মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, দেশে ও বিদেশে বসে। লাগামহীন মিথ্যাচারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে চরম বিভ্রান্তি ও অস্থিরতা তৈরি করছে। ফলে জনগণ কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা সেটা বুঝতে পারছে না। গত পনের বছরে দেশে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে এ কথা সত্য। কিন্তু উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগও জনমনে আছে।

রাজনীতিতে গত কয়েকবছরে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে জানিয়ে আজিম উদ্দিন বলেন, রাজনীতির ব্যাপক পরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করছি। এখন আর রাজনীতিতে ভালোলোকের স্থান নেই। ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবীদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও নেই আগের মত। জাতীয় সংসদের ৮০ ভাগ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলা দ্বারা পরিবেষ্টিত। ফলে কার্যত প্রকৃত রাজনীতি নির্বাসনে গেছে। সুযোগসন্ধানীরা ক্ষমতা ও অর্থকে ব্রত হিসেবে নিয়েছে। দৃশ্যত জনতার রাজনীতি প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে তা পরিষ্কার। ফলে প্রকৃত রাজনীতিবিদদের উপর জনগণের আস্থা ও সম্মানবোধ দিন দিন উঠে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এখনই এ বিষয়ে সতর্ক না হলে দেশ গভীর সংকটে নিপতিত হবে। রাজনীতিতে ভাল লোকজনকে জায়গা করে দেওয়া, সুস্থ রাজনীতির ধারা তৈরি করা সচেতন নাগরিক সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলটির নেতা ফেরদৌস বশির, সোহেল রহমান ও সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর