২৮ অক্টোবর ঘিরে উত্তাপ-শঙ্কা

বিবিধ, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-10-22 11:42:14

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতোই ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ততোই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউ কাউকে ছাড় না দিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে রাজনীতির মাঠে মুখোমুখি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আগামী ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। সেদিন যাতে বিএনপি নৈরাজ্য চালাতে না পারে- সেজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগও।

বিএনপি সূত্র জানায়, চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ হবে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ। এই মহাসমাবেশ সফল করতে ইতিমধ্যে সারাদেশে চলছে প্রস্তুতি সভা। কেন্দ্র থেকে দলের সিনিয়র নেতারাও ছুটছেন ঢাকার বাইরে। এসব সভায় দলের নেতাকর্মীদের বার্তা দিচ্ছেন এই মহাসমাবেশ দেশ, দেশের মানুষ, বিশেষ করে বিএনপির জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। দলটির নেতারা বলছেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল হলে সরকারের অস্তিত্ব থাকবে না। ওইদিন ঢাকা শহরকে মিছিলের নগরীতে পরিণত করতে চায় দলটি। শান্তিপূর্ণ ওই মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে।

আরও জানা যায়, গতবছর ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ ও চলতি বছরের ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচি দুটি প্রত্যাশা অনুযায়ী সফল করতে পারেনি বিএনপি। তবে ওই দুটি কর্মসূচির ব্যর্থতা ও অভিজ্ঞতায় এবার অনেকটা কৌশলী দলের নেতারা। সরকারের উদ্দেশ্যে কড়া কোন কথা না বলে বরং বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও মানুষের সমাগম ঘটাতেই মনোযোগী তারা। এজন্য বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদেরকে বিভিন্ন জেলাভিত্তিক দায়িত্ব দিয়ে ঢাকার বাইরে পাঠানো হচ্ছে। এসব নেতা জেলায় জেলায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রস্তুতি সভা করছেন এবং তাদেরকে মহাসমাবেশ নিয়ে কঠোর বার্তা দিচ্ছেন। বিগত যেকোন সমাবেশের চেয়ে এটির গুরুত্ব যে, বেশি তা তুলে ধরছেন তারা। একই সঙ্গে বিগত দিনের মতো মহাসমাবেশ ঘিরে যে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক বাধা-প্রতিবন্ধকতা থাককে সেটিও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তারা।

আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, মহাসমাবেশের নামে রাজধানীতে কোনো অশান্তি সৃষ্টি করলে এর কড়া জবাব দিতে পাড়া-মহল্লার মোড়ে পাহারা বসাবে তারা। বিএনপির মহাসমাবেশের ৬ দিন আগে থেকেই আজ রোববার থেকে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে সতর্ক পাহারা শুরু করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির ২৮ অক্টোবর ১০ ডিসেম্বরের মত অশ্বডিম্ব হবে। তখন কর্মীদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বিএনপি নেতাদের।

তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর আমাদেরও কর্মসূচি আছে। আমাদের কর্মসূচি আগেই ঘোষণা করেছি। নতুন করে কিছু নেই। ২৮ তারিখ মহাযাত্রা আমাদেরও আছে। ওইদিন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জনতার মহাসমুদ্র হবে। জনতার ঢল নামবে।

২৮ অক্টোবর নিয়ে শঙ্কার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয় না। এখন থেকে নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের দলের কর্মসূচি থাকবে। বিএনপি হলো সন্ত্রাসী দল। তাদের বিষয়ে দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগ সতর্ক আছে। তারা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।

বড় দুদলের পালটাপালটি কর্মসূচি নিয়ে ফের রাজধানীবাসীর মনে তৈরি হয়েছে নানা শঙ্কা। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও নেওয়া হচ্ছে বাড়তি সতর্কতা।

বিএনপি ও তার যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরা মনে করছে, এই মাসের মধ্যে সরকারকে ফেলে দিতে না পারলে সরকার তার পথেই এগিয়ে যাবে। তাদের অধীনে নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। আর সরকারও মনে করছে অক্টোবর মাসটা বিএনপিকে মোকাবিলা করা গেলে তফসিল ঘোষণার পর আর আন্দোলন থাকবে না। তাই যেকোনো উপায়ে বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে হবে। তবে এখানে মার্কিন ভিসানীতির একটি বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করছেন অনেকে।

২৮ অক্টোবর নিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে বানচাল করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নক আউট হয়ে গিয়েছিলো। জনগণ দমন, নিপীড়ন উপেক্ষা করে তৎকালীন সময়ে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমাবেশ ঘটিয়ে সরকারের গালে চপটাঘাত করেছিল ১০ ডিসেম্বর। তাই ১০ ডিসেম্বরের চেতনায় ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের মহাযাত্রা শুরু হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর