সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তৃতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের শেষদিন আজ। অবরোধের শেষ দিনে সিলেটে জীবনযাত্রা ছিলো প্রায় স্বাভাবিক। বৃহস্পতিবার (৯নভেম্বর) সকাল থেকে সিলেটের সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিলো। বিএনপি ও জামায়াতের গুটিকয়েক নেতাকর্মীরা দুয়েক জায়গায় মিনিট দশেকের জন্য মিছিল ও পিকেটিং করেছেন বলে জানা গেছে। সিলেট মহানগরীতে কয়েকটি স্থানে পিকেটিং দেখা গেলেও উপজেলায় পর্যায়ে তা নেই বললে চলে। মূলত তাদের টার্গেট হচ্ছে মহাসড়কের দিকে।
এদিকে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি ফেসবুকে ছবি আর ভিডিও আপলোড পর্যন্ত। শুধু শুধু অবরোধ দিয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে বলে দাবি করছেন সাধারণ মানুষ।
তবে, ছবি-ভিডিওর বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি বলেন, দলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন উপজেলায় মিছিল ও পিকেটিং করেছেন।
জানা যায়, বুধবার ও বৃহস্পতিবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের শুরু থেকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল ছিলো স্বাভাবিক। সিলেট নগরীতেও ছিলো নিত্যদিনের যানজট। সড়ক-মহাসড়কে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরণের গণপরিবহণ চলাচল করছে।
সিলেটের শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, সড়কগুলোয় যানবাহন চলাচল আগের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে। কদমতলী ও কুমারগাঁও বাস টার্মিনালে যাত্রী সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও বাস এসে প্রবেশ করছে এবং যথারীতি ছেড়েও যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সিলেট নগরী ষ্টেশন রোড, বন্দরবাজার, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার পয়েন্ট, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, মদীনা মার্কেট, টিলাগড়, দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশিদ চত্বর এলাকায় যানজট লেগে থাকতে দেখা গেছে। বিপনী বিতান, অফিস আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যথারীতি খোলা ছিলো।
বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক, সিলেট-সুনামগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমার নাজির বাজার, বিশ্বনাথের লামাকাজি এলাকায় পিকেটিং করা হয়েছে।
তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, কোম্পানীগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় অবরোধের কোনো ধরণের প্রভাব পড়েনি। কোথাও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীার পিকেটিং করতে দেখা যায়নি।এছাড়াও বিএনপির নেতাকর্মীরা উপজেলা পর্যায়ে পিকেটিং না করে তারা মহাসড়কে পিকেটিংর টার্গেট করছেন বলে জানা যায়।
অবরোধকারীদের বিশৃঙ্খলা ও যেকোনো ধরণের তৎপরতা ঠেকাতে সতর্কাবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ও নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপির নেতা কর্মীরা সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে আগুন ধরিয়ে অবরোধ করেছেন বলে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কোহিনুর আহমদসহ জেলা বিএনপির অনেক নেতাকর্মী ফেসবুকে ১মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করেন।
তবে দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা পিপিএম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘কোথাকার কোন ভিডিও এনে আপলোড করেছেন কে জানে, আমাদের থানা এলাকায় এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি। সব ক্লিয়ার আছে’।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মির্জা সম্রাট হোসেনের নেতৃত্বে পিকেটিং ও মিছিল করেছে সিলেট মহানগর যুবদল। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে সকালে পকেটিং করে অবরোধকারীরা। দুপুরে সিলেট মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরীর জিন্দাবাজার থেকে জেলরোডে সড়ক অবরোধ ও মিছিল বের করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নগরীর টিবিগেইট বিকালে মাত্র ১-২মিনিটের মধ্যে মিছিল ও পিকেটিং করে ছবি-ভিডিও ধারণ করে স্থান ত্যাগ করে নেয় অবরোধকারীরা। এসময় একটি মালবাহী ট্রাকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে তারা।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, আমরা মানুষের জন্য আন্দোলন করছি। সড়ক-মহাসড়কে আমাদের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি কর্মসূচিতে।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে না পেয়ে পরিবারকে হয়রানি করছে। যাকে যেখানে পাচ্ছে সেখানে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ছবি-ভিডিওর বিষয়টি সত্য নয়। তবে আমরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন ব্যবহার করে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি।
কোনো নেতাকর্মী বা পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে না জানিয়ে সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শেখ মো. সেলিম বলেন, জনগণের জান মালের নিরাপত্তার জন্য সিলেট জেলা পুলিশ মাঠে রয়েছে। জেলা পুলিশ কখনো কাউকে হয়রানি করেনি আর করবেও না। তবে, কেউ যদি আইনশৃঙ্খলার ব্যতয় ঘটায় বা ব্যক্তিগত জান মালের জন্য হুমকির কারণ হয় সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে মাঝ পথেই পণ্ড হয় যায় বিএনপির সমাবেশ। সমাবেশ বানচালের প্রতিবাদে পরের দিন (২৯ অক্টোবর) সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা বিএনপি হরতাল পালন করে। একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয়। এরপর আরও দুই দফায় অবরোধ কর্মসূচি দেয় দলটি।