সিদ্ধান্তহীন জাপার নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-11-11 19:44:07

নির্বাচনে অংশ নেওয়া, না নেওয়া প্রশ্নে এখনও অবস্থান পরিষ্কার করেনি জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি। তবে দলীয় মনোনয়ন ফরম তৈরিসহ অন্যান্য নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে দলটি।

জাতীয় পার্টির যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নিতে হলে দলীয় মনোনয়ন ফরম ও প্রতীক বরাদ্দের চিঠিসহ যে সব প্রস্তুতি দরকার। গত মাসেই সেগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।

অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবার দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দের চিঠিতে খোদ চেয়ারম্যান স্বাক্ষর করবেন। যাতে করে পার্টির চেয়ারম্যানকে বাইপাস করার সুযোগ না থাকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার মধ্যেই ৮৭ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থেকে যান। প্রতীক বরাদ্দের চিঠি ইস্যু করেছিলেন পার্টির তৎকালীন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। সেই রকম কোন সুযোগ দিতে চান না জিএম কাদের। কোন কারণে জিএম কাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে এবারও বাগড়া দিতে পারেন রওশন এরশাদ। অনেক সংসদ সদস্যই নাকি নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।

বিগত কয়েকটি উপনির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের চিঠিও পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দিয়েছেন বলে দফতর সূত্র জানিয়েছে। চলতি বছর অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের পৃথক প্রার্থী দিলেও জিএম কাদেরের প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করে ইলেকশন কমিশন।

পার্টি সূত্র জানিয়েছে, এবার দলীয় মনোনয়ন ফরমের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরমের দাম ছিল ২০ হাজার টাকা। এবার ফরমের দাম ৩০ হাজার টাকা করার চিন্তা ভাবনা চলছে। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাম ছিল ১৫ হাজার টাকা, আর ২০০৮ সালে নেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা।

যে কোন দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আসতে পারে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট তত্বাবধায়কের দাবিতে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। দাবি আদায়ে হরতাল অবরোধসহ টানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল এখন পর্যন্ত অবস্থান পরিষ্কার করেনি। পার্টির চেয়ারম্যান সময় বলে আসছে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তারা অংশ নেবে। তত্বাবধায়ক প্রশ্নে তাদের কোন বক্তব্য নেই।

গত ১১ জুন এক অনুষ্ঠানে জিএম কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে তার জায়গায় রেখে কোন পরিবর্তনকে আমরা পরিবর্তন মনে করি না। মন্ত্রীসভায় কে থাকলো না থাকলো অথবা সংসদে কতজন সদস্য আছে বা নেই তাতে কিছু এসে যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতা রেখে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না।

৪ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেছেন, আমরা এখন নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। আমরা এখনও জানি না দেশের পরিস্থিতি কি হবে। তবে সময় এলে সিদ্ধান্ত নেবো, নির্বাচনে অংশ নেবো কিনা। সময় এলে দেশের অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে। যতক্ষণ ঘোষণা না দিয়েছি, ততক্ষণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আছি। নেতাকর্মী প্রস্তুত থাকার জন্য বলছি।

জাতীয় পার্টির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরামের এক সভায় নির্বাচন প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নিতে পার্টির চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনি যা খুশি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

১১ নভেম্বর এক যোগদান অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, নির্বাচন যদি ফেয়ার না হয়, আমরা ভোট পাবো না, আমাদের ভোটাররা নিরীহ। আওয়ামী লীগের লোকজন নিরীহ না, তারা পুলিশ নিয়ে এসে বাইড়া ভোট নিবো। যারা আমাদের খাটো করে দেখবে তাদের সঙ্গে প্রেম নেই। আগামী নির্বাচন যদি মিনিমাম ফেয়ার হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে নিজের বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। মারমুর খেতে হলে খাবো।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেছেন, অসম নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। শেষ বয়সে এসে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত হতে চাই না, কারো নির্বাচনের বৈধতা দিতে পারি না। সিগন্যাল ডাইনে দিয়ে বায়ে যাবো না। অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। মানুষ জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে।

অবরোধ বিরোধী কর্মসূচির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সঙ্গে শান্তি কমিটি করবো! যে শান্তি বাহিনীকে একাত্তরে গুলি করে হত্যা করেছি। এবার সেই শান্তি কমিটিতে নাম লেখাবো!

এ সম্পর্কিত আরও খবর