অর্থনীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের যত প্রতিশ্রুতি

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-27 16:16:39

সামষ্টিক অর্থনীতিতে উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা জানান।

ইশতেহারে বলা হয়, গত দেড় দশকে বাংলাদেশ একটি গতিশীল ও দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মর্যাদা লাভ করেছে। জাতীয় আয়ের মানদণ্ডে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৩তম অর্থনীতির দেশ। এসময়ে দেশের কৃষি, শিল্প ও সেবাখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরও বলা হয়, নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগ সরকার লক্ষ্য ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি কৌশল গ্রহণ করবে। বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা করা হবে।

অর্থনীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের যত প্রতিশ্রুতি-

মুদ্রা সরবরাহ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা: মুদ্রা সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায়-উপকরণ হবে নীতি সুদ হার ব্যবহার। কর্মপোযোগী প্রশিক্ষিত যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ঋণ সরবরাহ সম্প্রসারণ করা হবে। আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে অনিশ্চয়তা লাঘব করবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং এক্ষেত্রে ব্যাংক যাতে বিধি নির্ধারিত সঞ্চিতি রাখে তা নিশ্চিত করা হবে।

বিনিয়োগ ও উন্নয়ন: আওয়ামী লীগ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতের গুরুত্ব অব্যাহত রাখবে এবং যুক্তিসংগত ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ ব্যবহার করবে।

আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমন:

• অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
• রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে ঘুষ দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শান্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।

দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস: ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্রের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনব।

আমার গ্রাম-আমার শহর; প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ: আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে পূর্বের ধারাবাহিকতায় উন্নত রাস্তাঘাট, যোগযোগ, সুপেয় প'নি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মান-সম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অব্যাহত থাকবে। গ্রামের যুবসমাজের শহরমুখ হওয়ার প্রবণতা কমাতে গ্রামেই আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তরুণ যুবসমাজ; তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি: নির্বাচিত হলে দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আমরা তরুণ ও যুব সমাজকে সম্পৃক্ত রাখব। কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ, জেলা ও উপজেলায় ৩১ লাখ লোকের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি: সরকার কৃষির জন্য সহায়তা ও ভর্তুকি তথা- কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি উপকরণে বিনিয়োগ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে। ব্যবহারযোগ্য কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা হবে।

বাণিজ্যিক কৃষি, জৈবপ্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং রোবেটিকস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স, ন্যানো-টেকনোলজিস্হ গ্রামীণ অকৃষিজ খাতের উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন মোকাবিলায় উপযুক্ত কর্মকৌশল গ্রহণ করা হবে। কৃষির আধুনিকায় প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষি গবেষণার সুযোগ -সুবিধা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ অব্যাহত থাকবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ: ২০২৮ সালের মধ্যে গবাদিপশুর উৎপাদনশীলত ১.৫ গুণ বৃদ্ধি করা হবে। বাণিজ্যিক দুগ্ধ, পোল্ট্রি ও মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনীয় ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতিগত সহায়তা প্রদান করা হবে।

শিল্প উন্নয়ন: দেশের শ্রমশক্তিতে প্রতি বছর নতুন যুক্ত হওয়া ২০ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা অওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এটি অর্জনে আমরা ১৫০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। নতুন নতুন শিল্প স্থাপন করে আমরা শিল্পখাতের বিকাশ ঘটাবো।

নির্বাচিত হলে উদ্যোক্তা শ্রেণিকে আকৃষ্ট করতে আমরা যথোপযুক্ত নীতি প্রণয়ন ও কর্মসূচি গ্রহণ করবো। কর্মসংস্থান সম্প্রসারণের জন্য ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প, তাঁত ও রেশম শিল্পকে সংরক্ষণ এবং প্রতিযেগিতা সক্ষম করা হবে। বেনারসি ও জামদানিকে উৎসাহিত করা হবে। চামড়া ও পাটপণ্যে বৈচিত্র্য আনা হবে এবং এই শিল্পগুলোকে লাভজনক করার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। পাটশিল্পে বেকারি খাতের উদ্যোগ উৎসাহিত করা হবে। কামার, কুমার ও মৃৎশিল্পীদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজন অনুসারে এখাতে প্রণোদনা দেওয়া হবে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি: বিদ্যুৎ খাতে আমরা গত ১৫ বছরে যুগান্তকারী ও বৈদুতিক উন্নয়ন ঘটিয়েছি। নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

পরিবেশবান্ধব জ্বালানি থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। নবায়নযোগ ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য গ্রিড যুগোপযোগী করার কার্যক্রম শুরু ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে।

জ্বালানি খাত: দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্যাস ও এলপিজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে।

যোগাযোগ: রূপকল্প-২০৪১ অর্জনে আওয়ামী লীগ সরকার নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিগত ১৫ বছরে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।নৌপথ, সড়কপথ, রেলপথ ও বিমানের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত উন্নত করা হবে।

অবকাঠামো উন্নয়নে মেগা প্রজেক্ট: আওয়ামী লীগ সরকার ৩ মেয়াদে বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। আশ করা যায়, জাতির অহংকার ও গর্বের প্রতীক পদ্মা সেতুসহ এই সকল প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল বয়ে আনছে।

সুনীল অর্থনীতি: সমুদ্র সম্পদ আর্থসামাজিক উন্নয়নে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর উদ্দেশে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি। সমুদ্র সম্পদ তেল, গ্যাস, খনিজ, মৎস্য সম্পদ আহরণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সমুদ্র বন্দর ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হয়েছে; যা ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণে সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

এমডিজি অর্জন এবং এসডিজি বাস্তবায়ন কৌশল (২০১৬-৩০) : আমরা এমডিজি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি। টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন অর্থাৎ এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাসস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি, স্যানিটেশন সুবিধা, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, সমতা নিশ্চিতকরণসহ প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আর্থ সমাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নতুন কৌশল উদ্ভাবন ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছি।

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০: জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা - ২১০০ এর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

• ২০৩৫ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ
• ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন।
• ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জন।

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হচ্ছে ৬টি-

• বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিপর্যয় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
• পানি ব্যবহারে অধিকতর দক্ষতা ও নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা।
• সমন্বিত ও টেকসই নদী অঞ্চল এবং মোহনা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
• বায়ু ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ এবং সেগুলোর যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা।
• আন্তঃদেশীয় পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন গড়ে তোলা।
• ভূমি ও পানিসম্পদের সর্বোত্তম সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর