কর্মপন্থা ঠিক করতে দ্বিধায় বিএনপির নেতারা

বিএনপি, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 04:33:55

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর, কীভাবে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং করণীয় কী তা ঠিক করতে দ্বিধার মধ্যে রয়েছে বিএনপির নেতারা। এ ক্ষেত্রে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশনা এবং লন্ডনে অবস্থিত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম।

তবে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেনো, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন মামলা, হামলার শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসন এবং তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ ভোট জালিয়াতি ও ডাকাতির অভিযোগ তুলে সরকার বিরোধী আন্দোলনের কথা বলেন। এদিক থেকে জোটটির অন্যতম শরিক বিএনপি সহসাই আন্দোলনের কথা ভাবছে না। আগে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করা ও তাদের একটা স্থিতাবস্থায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এ রকম সিদ্ধান্তেও নেতাদের মধ্যে রয়েছে দ্বিমত। দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের কেউ কেউ এক সঙ্গে দলকে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার কথাও ভাবছে। অপর দিকে আবার কেউ কেউ ভাবছে চিন্তা ভাবনা নয়, সরাসরি কার্যক্রমে চলে যাওয়া উচিৎ।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ সদস্য মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি পরিষ্কার না করা এবং কিছু জনপ্রিয়হীন নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি প্রভাব ফেলেছে। এই সিদ্ধান্তগুলো তারেক রহমান নিজেই নিয়েছিলেন। এ জন্য স্থায়ী কমিটির কেউই স্ব-উদ্যোগে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান না। তবে নিজেদের মনোভাব গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

দলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘যদি কোনো কার্যক্রম নিয়ে তা ফলপ্রসূ করা না যায় তাহলে তার কোনো মূল্য নাই। শুধুমাত্র ভাবনা দিয়ে কিছু হবে না।  ভাবনাগুলো ফলপ্রসূ করতে হবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে শুনতে চাই অ্যাকশন, ভাবনা নয়। এর আগে সাংগঠনিক ভাবে দলকে শক্তিশালী করা বা নেতাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা অনেক নেতাই বলেছেন।’

বিষয়গুলো নিয়ে তিনি অভিমত প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি এগুলোর বাস্তবায়ন চাই। কিন্তু কে বাস্তবায়ন করবে? দল সম্পর্কে অনেক হতাশা কাজ করে আমার।'

নাম প্রকাশ না করে দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'ভোট ডাকাতি করা বর্তমান সরকার যেকোনো ভাবে আগামী ৫ বছর থাকবেই। সেদিক থেকে এখন নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। অনেকে তাদের ঘরে ফিরতে পারে না, তাদের ফেরাতে হবে। সাংগঠনিক ভাবে দলকে শক্তিশালী করতে হবে। ম্যাডামকে (খালেদা জিয়াকে) বের করার আন্দোলন করতে হবে। তাছাড়া নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আর কিছুই বলার নাই।'

সম্প্রতি দলটির দুইজন প্রভাবশালী স্থায়ী কমিটির সদস্য একটি আলোচনা সভায় কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে ঢেলে সাজানোর দরকার বলে মত দেন। এক্ষেত্রে তরুণদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানান।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘কী কর্মসূচি বা কর্মপন্থা হবে সেটা বাইরে আলোচনা করার কোনো সুযোগ নেই। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম বা কাউন্সিল যাই বলেন এগুলো হওয়ার আগে স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে আলোচনা হবে। তারপর আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা হবে। পরে এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর