রংপুরে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন।
আগামীকাল শনিবার (২৬ অক্টোবর) রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে রংপুরে যাবেন পুলিশ প্রধান মো. ময়নুল ইসলাম। আইজিপির সফরসঙ্গী হয়ে সারজিস, হাসনাতের আগমনকে পুলিশের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সংঘাতে জড়ানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন দলের নেতারা। তাদের আগমনকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি মহানগরের নেতাকর্মীদের ডেকে জরুরী সভা করেছে। অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও জরুরী সভা করেছে। এ নিয়ে নগরজুড়ে ছড়িয়েছে উত্তেজনা।
জাপার বক্তব্যে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছিল। এতে ক্ষুব্ধ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা নিজ দূর্গ খ্যাত রংপুরে তাদের দু’জনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এমনকি প্রশাসন সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে রংপুরে আনলে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন দলের কো-চেয়ারম্যান ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
এদিকে শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে তারা আইজিপি’র সাথে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত এবং দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে শাহাদাতবরণকারী ও আহত বীরদের সম্মানে উৎসর্গীকৃত সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন। পুলিশের পক্ষ থেকে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ রংপুর আগমনের খবরে উত্তেজিত জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে জরুরী সভায় অংশ নেয় দলের ৩৩টি ওয়ার্ড এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
সভা শেষে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ জাতীয় পার্টির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে দলের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছিল তাদের রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার। আমি মুখপাত্র হিসেবে সেই ঘোষণা দিয়েছি। সারজিস ও হাসনাত আইজিপির প্রোগ্রামের সঙ্গে রংপুরে আসার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি দলের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি। প্রেসিডেন্ট ইস্যুতে দেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় কোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি যেন না হয় সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে জাপার অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা কেউ যেন এই ইস্যুতে বড় ধরনের ঘটনার জন্ম না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান। আমরা গঠনমূলক আন্দোলন করতে থাকবো। আশা করছি যে কোনো ঘটনা মোকাবিলা করার মত শক্তি ও সক্ষমতা জাতীয় পার্টির রয়েছে।
জাপার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ‘সারজিস তুই আসিস না, পিঠের চামড়া থাকবে না’, ‘রংপুরের মাটি, জাতীয় পার্টির ঘাঁটি’ নানা স্লোগান দিতে থাকেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা জরুরী সভা করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ বলেন, জাতীয় পার্টি আসলে আমাদের কোনো হেডেক না। তাদেরকে নিয়ে কোনো বক্তব্যও নাই। আগামীকালের প্রোগ্রাম নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে।