টিপু তুমি কার, রাঙ্গায় হাহাকার!

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 21:55:46

রওশন এরশাদের বাসায় সাংবাদিক সম্মেলন করে রওশনকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। ঘণ্টা দু'য়েক পরে বনানী চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি জিএম কাদের- নিজেকে পার্টির গঠনতান্ত্রিক চেয়ারম্যান দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদের তার পক্ষে গঠনতন্ত্রের নানা ধারা উপ-ধারার ব্যাখ্যা দেন। এরশাদ জীবদ্দশায় তাকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে গেছেন, সেটাও জানিয়ে দেন। দু'টি সাংবাদিক সম্মেলনেই দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর অবস্থান লক্ষণীয়। দুই গ্রুপই অনেক শোডাউন করে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়।

তবে ব্যতিক্রম দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও লঞ্চ মালিক সমিতির নেতা গোলাম কিবরিয়া টিপু। দু'টি সাংবাদিক সম্মেলনেই তাকে প্রথম সারিতে দেখা গেছে।

এ প্রসঙ্গে গোলাম কিবরিয়া টিপু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'দলটা যাতে না ভাঙে আমি আসলে সেই চেষ্টা করছি।'

তবে আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- পার্টির মহাসচিবের অনুপস্থিতি। দুই সাংবাদিক সম্মেলনের কোনোটিতেই মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দেখা যায়নি।

রওশন পন্থিরা দাবি করেছেন- রাঙ্গা তাদের সঙ্গে আছেন, ফোনে সম্মতি দিয়েছেন। আবার জিএম কাদেরও জানিয়েছেন- মহাসচিব তার সঙ্গেই আছেন।

রওশন-কাদের ইস্যুতে সিনিয়র নেতারাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। রওশনের পাশে ছয়জন সংসদ সদস্যসহ ১১ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে দেখা যায়। আবার কাদেরের সাংবাদিক সম্মেলনেও ছয়জন সংসদ সদস্যসহ ১২ জনের মতো প্রেসিডিয়াম সদস্যকে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন: রওশন নিজের মুখে কিছু বলেননি: জিএম কাদের

রওশনের বাসার সামনে তার নামে স্লোগান দেওয়া হয়। 'রওশন তুমি এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সাথে, পল্লী মাতা এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সাথে'। আবার বনানীতে স্লোগান ওঠে- 'জিএম কাদের এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সাথে। আনিসের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে…..দালাল তোরা নামিস না হাড়-মাংস রাখব না….'।

এরশাদের জীবদ্দশায় জাতীয় পার্টি তিন দফায় ভেঙেছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর দুই মাস পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই আরেকবার ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে দলটি। অতীতে যেভাবে ভেঙেছে এবারও অনেকটা তেমন পরিস্থিতি। প্রয়াত কাজী জাফর আহমদের হাত ধরেই সর্বশেষ ভাঙনের শিকার হয়েছে। ওই সময়ে এরশাদ জাফরকে বহিষ্কার করলে, কাজী জাফরও পাল্টা বহিষ্কার করেন এরশাদকে। এভাবে জন্ম নেয় জাতীয় পার্টি (জাফর)।

এবারের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। এবার কেউ কাউকে বহিষ্কার করেননি। দু'পক্ষই নিজেকে চেয়ারম্যান দাবি করছেন, একে অপরকে কো-চেয়ারম্যান বলছেন। জিএম কাদের বলেছেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন। তাহলে কী সেই আগের পথেই হাঁটতে যাচ্ছে জাপা?

আরও পড়ুন: ‘বাহ্যিকভাবে রওশনকে কেউ চেয়ারম্যান ঘোষণা করতে পারে না’

প্রথম দফায় জাতীয় পার্টি ভাঙনের কবলে পড়ে মিজানুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে। দ্বিতীয় দফায় ভাঙনের শিকার হয় নাজিউর রহমান ও কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে। তখন এরশাদের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে পৃথক জাতীয় পার্টি গঠন করে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। ফিরোজ রশীদ অনেক পরে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে ফিরে আসেন। এখন তিনি জিএম কাদেরের পেছনে একাট্টা আছেন বলে ধারণা করা হয়।

জিএম কাদের পার্লামেন্টারি পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার পর থেকেই ভাঙন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জিএম কাদেরের চিঠি ইগনোর করার জন্য রওশনের পক্ষ থেকে পাল্টা চিঠি দেওয়া হয়। রওশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যরা তাকে নেতার কাজ চালিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। আবার জিএম কাদের বলেছেন, বেশিরভাগ এমপি তাকে নেতা হওয়ার জন্য সমর্থন দিয়েছেন।

এর আগে এরশাদের মৃত্যুর পর জিএম কাদেরকে যখন পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয় তখন প্রতিক্রিয়া দেখায় রওশন। রওশন পন্থিরা জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলে মনে করেন। তারা কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে স্বীকৃতি দেন না।

এখন দু'টি বিষয় সামনে চলে এসেছে। একটি হচ্ছে- ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনে পার্লামেন্টারি পার্টির চেয়ারম্যান তথা বিরোধী দলীয় নেতার আসনে কে বসবেন। একই সময়ের মধ্যে রংপুর-৩ (সদর) উপ-নির্বাচনে কোন গ্রুপ প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। এক গ্রুপ কাউকে মনোনয়ন দিলে অন্য গ্রুপ সেটাকে কীভাবে নেবেন?

আরও পড়ুন: 'রওশন এরশাদ আজ থেকে জাপার চেয়ারম্যান'

আরও পড়ুন: জিএম কাদেরকে ঠেকাতে স্পিকারকে রওশনের চিঠি

এ সম্পর্কিত আরও খবর