ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বার্তা দিয়ে রাখল নিউজিল্যান্ড

ক্রিকেট, খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-10-05 21:40:56

লড়াইটা এমন ম্যাড়মেড়ে হবে, কে ভেবেছিল?

গেল বিশ্বকাপের ফাইনালে লড়াইটা হয়েছিল ১০২ ওভারের। তা শেষেও দুই দল ছিল সমতায়, যা ভেঙেছিল বাউন্ডারির সংখ্যা। যাতে কপাল পুড়েছিল নিউজিল্যান্ডের। চার বছর পর সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াইটা একেবারে শুরুর দিনেই। তাতে একটা চাপা প্রত্যাশাও গড়ে উঠেছিল, আগের ফাইনালের মতো রোমাঞ্চের পুনরাবৃত্তির।

কিন্তু তা আর হলো কই! নিউজিল্যান্ড যে তা হতে দেয়নি! ২৮৩ রান তাড়া করে ইংল্যান্ডকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে ব্ল্যাকক্যাপরা। তাও আবার ১৩.৪ ওভার হাতে রেখেই! তাতে কিউইরা বিশ্বকাপের বাকি ফেভারিটদের একটা বার্তাও দিয়ে রাখল বৈকি! জানান দিল, আমরাও শিরোপাটা জিততেই এসেছি!

২০২৩ বিশ্বকাপের শুরুর ম্যাচটা ছিল প্রথা ভাঙার ম্যাচ। চলতি শতাব্দিতে যে এবারই প্রথম কোনো বিশ্বকাপে শুরুর ম্যাচে ছিল না স্বাগতিক দেশের উপস্থিতি! তার প্রভাবটা পড়েছিল গ্যালারিতেও। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে রীতিমতো শূন্যতার শোকসভা বসে গিয়েছিল যেন। 

তবে মাঠের ক্রিকেটটা শুরুতে জানান দিচ্ছিল রোমাঞ্চেরই। ইংলিশদের শুরু থেকেই বিপাকে রেখেছিল নিউজিল্যান্ড। তবে জো রুট ছিলেন এক পাশ ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে। ওপাশে সঙ্গীর আসা যাওয়া দেখেছেন বটে, নিজে খেলেছেন ৭৩ রানের ইনিংস। তবে বাকিরাও যে একেবারে খারাপ করছিলেন, তা নয়, শুধু থিতু হয়ে উইকেট ছুঁড়ে আসছিলেন এই যা! ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১ থেকে ১১ সবাই ছুঁলেন দুই অঙ্ক, এরপরও রানটা হলো 'মোটে' ২৮২। 

ইংল্যান্ড বোলিংয়ে শুরুটা করেছিল দুর্দান্ত। দ্বিতীয় ওভারে তুলে নিয়েছিল উইল ইয়াংয়ের উইকেট। তবে তাদের সুখটা শেষ ওখানেই। নিউজিল্যান্ড যে পুরো ইনিংসে উইকেটই খোয়ায়নি আর!

ইয়াং ফেরার পর উইকেটে আগমন রাচিন রবীন্দ্রের, যিনি আবার তার ছোট্ট ক্যারিয়ারে তিন তো দূর অস্ত, চার-পাঁচ-ছয়েও খেলেননি কখনো। নতুন বলের সামনে তিনি ভড়কে তো যানইনি, ইংলিশদের শাসিয়েছেন বেশ। ওদিকে ওপেনার ডেভন কনওয়ে ছিলেন শুরু থেকে যেমন ছিলেন তেমনই, আগ্রাসী। তাতেই কাজটা সহজ হয়ে গেছে নিউজিল্যান্ডের।

দ্রুত উইকেট খুইয়ে খোলসে ঢুকে যাওয়ার বদলে দুজন খেলেছেন একেবারে হাত খুলে। প্রথম দশটা ওভারের রান দেখুন, ১০, ০ (উ), ৯, ০, ৮, ১০, ১৭, ৯, ১০ ও ৮। ৮১ রান উঠেছে প্রথম পাওয়ারপ্লেতে, যা শেষ আট বছরে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ। ইংলিশদের পরিকল্পনাটা জানালা দিয়ে পালিয়েছে তো তখনই! শুরুর দশ ওভারে যে ভিতটা গড়ে নিয়েছিলেন দুজনে, তার ওপর দাঁড়িয়েই এরপর রান করে চলেছেন অনায়াসে। 

দুজন মিলে এরপর ভেঙেছেন একের পর এক রেকর্ড। বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল ১৬৮ রানের, ১৯৯৬ বিশ্বকাপে যা গড়েছিলেন লি জারমন আর ক্রিস হ্যারিস মিলে। সেটাকে দুইয়ে ঠেলে দেন দুজনে। 

বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের দ্রুততম সেঞ্চুরি ছিল মার্টিন গাপটিলের, ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮৮ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন। সে রেকর্ডটা আজ ভেঙেছে, তাও একবার নয়, দুবার। ৮৬ বলে সেঞ্চুরি করে প্রথমে কনওয়ে, এরপর ৮২ বলে সেঞ্চুরি করে রবীন্দ্র ভাঙেন রেকর্ডটা। নিউজিল্যান্ডের অনায়াস জয় এল তাতেই। সঙ্গে বার্তাটা? তা তো দেওয়া হয়েই গেছে!

নিউজিল্যান্ডের পক্ষে কথা বলছে একটা 'গোবেচারা' ফ্যাক্টও। শেষ চার বিশ্বকাপেই শেষ হাসিটা হেসেছে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া দলটা। এবার বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি পেল কিউইরা। আগের চার বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তিটাও যে নিউজিল্যান্ড এবার ঘটিয়ে ফেলতে চাইবে, তা আর বলতে!

এ সম্পর্কিত আরও খবর