বছর দুই আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুশফিকুর রহিমের এক পোস্ট ঠিক ছিল এমন। ‘টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে আজ আমি অবসর নিচ্ছি। তবে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট এবং ওয়ানডে খেলা চালিয়ে যাব। আশা করছি এই দুই ফরম্যাটে আমি আরও কিছু নিয়ে আসতে পারব দেশের জন্য।’ ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তার করা এই পোস্টে সবাই স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছিলেন তার অবসর। সেখানে কারণ হিসেবে দুটি জিনিস টেনে আনা যায়। প্রথমটা, সে সময়ে ব্যাট হাতে ছন্দে ছিলেন না তিনি। দ্বিতীয়টি, তার পোস্টে ছিল স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার সুর। তবে এতদিন পর কেনই বা আবারও সেই পুরনো স্মৃতি কুঁড়িয়ে আনতে হচ্ছে?
বিষয়টি আসলে জেঁকে বসেছে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের পর মুশফিকের প্রেস কনফারেন্সের একদম শেষ দিকে। একের পর নানা ইস্যু ধরে বেশ গুছিয়ে এবং পরিষ্কার করে কথা বলছিলেন তিনি। সেখানে শেষ দিকের এক প্রশ্নে যেন অনেকটাই ঘোলাটে তার উত্তর।
দীর্ঘ ১৩ মিনিটে প্রেস কনফারেন্সের শেষ দিকে এসে এক প্রশ্ন উঠল, তামিমের সঙ্গে আপনিও (মুশফিক) আছেন আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায়, তবে আপনারা কেউই আর জাতীয় দলে খেলেন না…সেই প্রশ্ন পুরো করার আগেই মুশফিকের উত্তর, ‘রিটায়ার কি করেছিলাম?’
তবে কি তিনি ভুলেই গেছেন যে তার অবসরের পেরিয়েছেন দেড় বছর। এমনটা মনে করিয়ে দিতেই মুশফিকের পাল্টা উত্তর, ‘হ্যাঁ, রিটায়ার করেছিলাম’। হাসিমুখে এই উত্তর এলেও সাংবাদিকরা এতে খুঁজে ফিরছিলেন রহস্যের ফাঁদ। তবে কি মুশফিকের সেই অবসরের পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো গল্প?
সেই উত্তর খুঁজতেই প্রেস কনফারেন্স রুম ছেড়ে মুশফিকের পিছু নিলেন অনেকেই। সম্প্রতি ব্যাট হাতে এই ফরম্যাটে দারুণ ফর্মে আছেন তিনি। বিপিএলের গত আসরেও খেলেছিলেন দুর্দান্ত। এতে হঠাতই নেওয়া অবসরের সিদ্ধান্তে আফসোস হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে মুশফিক বলেন, ‘না! না! (অবসর প্রসঙ্গে) রিগ্রেট করি না। রিগ্রেট করার কী আছে (হাসি)?’
মুশফিকের এবারের উত্তরে যেন রহস্যের বাড়তি গন্ধ। গত আসরে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ৩৫৭ রান করেছিলেন। সেবারও তার দল উঠেছিল ফাইনালে। এবারও হয়নি তার ব্যতিক্রম। শুধু রানটা আরও ছাড়িয়ে, এখন পর্যন্ত তার মোট রান ৩৬৭। এসব পরিসংখ্যানও কথা বলছে মুশফিকের হয়েই। এবং এ নিয়ে জানতে চাইলে মুশফিক বলেন, ‘এটা তো এখন ভালো খেলার পর বলছেন। আগে তো কেউ এটা বলেননি!’
তবে কি স্রেফ আক্ষেপ থেকেই অবসরে না কি অন্য কিছু? সেই প্রশ্নের গভীরতা আরও বাড়িয়ে দিল মুশফিকের করা পাল্টা এক প্রশ্নে। ‘শুধু আমি একটা প্রশ্ন করি। আমি কি টি-টোয়েন্টিতে অবসর নিয়েছি নিজের ইচ্ছায়? শুধু এতটুকু বলার আছে। যখন অবসর নিয়েছিলাম, তার আগের এক মাস একটু দেখে নিয়েন। আর কিছু বলার নেই।’
আপাতত এই অবস্থা জলঘোলা হয়েই থাকল। কেন বা কীসে বা সেটির ভিত্তিতেই বা কী? এসব প্রশ্নও আপাতত প্রশ্নই রয়ে গেল।