অনেক তারার ভিড়ে হঠাৎ নায়ক ফরহাদ রেজা!

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, সিলেট থেকে | 2023-08-24 20:27:00

এই ম্যাচের বাঁক বদলালো একবার নয়, অনেকবার! একেক সময় একেকজন আলোকচ্ছটায় এলেন।

তবে সবাইকে ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত মাত্র ৬ বলে হার না মানা ১৮ রান করে ‘ম্যাচের তারকা’ বনে গেলেন ফরহাদ রেজা! অথচ তার খেলা শেষের এই ৬ বল ছাড়া ম্যাচের আর কোন সময়ে তার নামই যে আলোচনায় ছিলো না। ম্যাচ শেষেই সেই ফরহাদ রেজাকেই বুকে জড়িয়ে ধরলেন রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। শেষ ওভারে এসে রংপুর ম্যাচ জিতলো ৪ উইকেটে।

১৯৪ রানের বিশাল সংগ্রহ তুলেও এই ম্যাচ জিততে পারেনি সিলেট সিক্সার্স। অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার বিপিএলে তার বিদায়ী ম্যাচে হার দেখলেন। অথচ ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী এই ম্যাচ বেশিরভাগ সময়ে সিলেটের হাতেই ছিলো। মেহেদি হাসান রানার খরুচে বোলিং যে দলকে ডোবালো। ৪ ওভারে বিপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৫৭ রান খরচ করা বোলার এখন সিলেট সিক্সার্সের এই তরুণ পেসার।

ম্যাচের প্রথমভাগে ৬ ছক্কা ও ৫ বাউন্ডারিতে মাত্র ৫১ বলে ৮৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা সাব্বির রহমানের ওপরই ছিলো সব ফোকাসের আলো ছিলো। চলতি টুর্নামেন্টে এক ম্যাচে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা তারই। নিকোলাস পুরান ২৭ বলে অপরাজিত ৪৭ রান করলেও সাাব্বিরের ৮৫ রানই সিলেটের ইনিংসের প্রানভোমরা।

রান তাড়ায় নামা রংপুর রাইডার্সের ইনিংসে হঠাৎ করে ম্যাচের সব ফোকাসের কেন্দ্রবিন্দু ঘুরে যায় রাইলি রুশো ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের ওপর। যেভাবে দুজনে ব্যাট করছিলেন তাতে সিলেটের ১৯৪ রানকে হাতের খুব কাজের জিনিষই মনে হচ্ছিলো।

কিন্তু ঠিক সেই সময় এই ম্যাচের মঞ্চে নিজের উপস্থিতি ঘোষণা দিলেন তাসকিন আহমেদ। সিলেট সিক্সার্সের এই পেসার তার তৃতীয় ওভারে দুর্দান্ত বোলিংয়ের পারফরমেন্স দেখালেন। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে তুলে নিলেন রাইলি রুশোকে। যার স্কোর তখন ৩৫ বলে ৬৫। সেই ওভারের শেষ বলে তাসকিনের আরেক শিকার ‘বিগফিস’ এবি ডি ভিলিয়ার্স (২১ বলে ৩৪ রান)। সেই ওভারে মাত্র ৭ রান খরচে এই দুটি প্রাইজ উইকেট তুলে নিয়ে তাসকিন আহমেদ দুহাতে হাত মেলে মাঠেই যেন পাখির মতো উড়তে শুরু করলেন।

তার সেই উল্লাসই জানান দিলো ম্যাচে ফিরেছে সিলেট। এবং বেশ ভালভাবেই। তবে এই ম্যাচে তাসকিনের শো’ তখনো শেষ হয়নি। নিজের চতুর্থ এবং শেষ ওভারেও তাসকিন ফের জোড়া শিকার করলেন। ক্রমশ বিপদজনক হয়ে উঠা মোহাম্মদ মিঠুন ও নাহিদুল ইসলামকে ফিরিয়ে দিলেন। শেষের ১৮ বলে রংপুর রাইডার্সের জয়ের প্রয়োজন দাড়ালো ৩৫ রানের। শেষ দুই ওভারে সেই হিসেব আরো কমলো; চাই ২৪ রান।

শেষের এই দৃশ্যে ম্যাচের মঞ্চে হাজির হওয়া ফরহাদ রেজা ব্যাট হাতে বদলে দিলেন সব হিসেব। ২ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় মাত্র ৬ বলে তার অপরাজিত ১৬ রান রংপুরকে ম্যাচ জেতালো ৩ বল আগেই।

একটু মনে করিয়ে দেই, ১৩ জানুয়ারি মিরপুরে এই ফরহাদ রেজাই শেষ ওভারে ব্যাট করতে নেমে রাজশাহীর বিপক্ষে ম্যাচে দলকে হারিয়ে দেন। সেই ম্যাচে রাজশাহীর পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের শেষ ওভারে চার বলে ব্যাটে বলই লাগাতে পারেননি তিনি! জয়ের অবস্থানে থেকে সেই ম্যাচ হেরে যায় রংপুর।

সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে সেই ফরহাদ রেজাই প্রায় ছিটকে পড়া ম্যাচে কঠিন অবস্থা থেকে দলকে জেতালেন; হ্যাঁ সেই ব্যাট হাতেই!

আরেকবার প্রমানিত ক্রিকেট শুধু নেয় না, ফিরিয়েও দেয় একেবারে সুদে-আসলে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: সিলেট সিক্সার্স: ১৯৪/৪ (২০ ওভারে, সাব্বির ৮৫, আফিফ ১৯, ওয়ার্নার ১৯, পুরান ৪৭* মাশরাফি ২/৩১)। রংপুর রাইডার্স: ১৯৫/৬(১৯.৩ ওভারে, হেলস ৩৩, রুশো ৬১, ভিলিয়ার্স ৩৪, মিঠুন ১৪, নাহিদুল ১৯, মাশরাফি ৫*, ফরহাদ রেজা ১৮*, তাসকিন ৪/৪২, মেহেদি হাসান রানা ০/৫৭)। ফল: রংপুর রাইডার্স ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা: রাইলি রুশো

এ সম্পর্কিত আরও খবর