রোনালদোর কান্না, রোনালদোর তৃপ্তি

ফুটবল, খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-07-02 12:36:29

সবশেষ ১৩ পেনাল্টির যার মিস হয়নি একটিও, ক্যারিয়ারে পেনাল্টি থেকে দেড় শতাধিক গোল করার অবিশ্বাস্য কীর্তি যার, সেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কাল পেনাল্টি মিস করেছেন। মহাগুরুত্বপূর্ণ গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে দলকে বিদায়ের পথে ঠেলে দিয়েছিলেন আরও একটু।

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের অন্তিম মুহূর্তে এই মিসের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন রোনালদো। সংক্ষিপ্ত বিরতির এই সময়ে যখন সবাই পরের মিনিট পনেরোর জন্যে প্রস্তুতি নেয়, তখন সতীর্থরা হতাশ রোনালদোকে সান্ত্বনার জন্যে ছুটছেন। কেউ রাখছিলেন মাথায় হাত, কেউ পিঠে; ইস্পাতসম দৃঢ়তা যার ক্যারিয়ারজুড়ে ম্যাচ চলাকালে তাকে এমন ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি আগে।

ম্যাচের ১০৫তম মিনিটের ওই পেনাল্টি মিস যতটা না রোনালদোর, তারচেয়ে বেশি কৃতিত্ব স্লোভেনিয়ার গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাকের। মাঠে রোনালদোর সাথে যুদ্ধ যার একের পর এক, সেখানে তিনি তাকে ধরতে পেরেছেন ভালোভাবেই। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে যে শট রুখেছেন, বলা যায় গোলপোস্টে ওবলাকই ছিলেন বলে এমনটা সম্ভব হয়েছে।

রোনালদো-ওবলাকের ছিল কাল ২১তম মুখোমুখি লড়াই। আগের ২০ সাক্ষাতে রোনালদো গোল পেয়েছেন ১১টি। অধিকাংশ ফল নির্ধারক। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নিশ্চিতভাবেই ২০১৬ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি, যেখানে ৭২ হাজার দর্শকের সামনে আতলেতিকো মাদ্রিদের ইয়ান ওবলাককে টাইব্রেকারে পরাস্ত করে রিয়াল মাদ্রিদ জিতেছিল ক্লাব পর্যায়ের ইউরোপ সেরার ট্রফি।

রোনালদো-ওবলাক যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান সমান; ৬ জয়ের বিপরীতে ৬ পরাজয়। গতকালের ম্যাচের আগে স্লোভেনিয়া ও পর্তুগাল একবারই মুখোমুখি হয়েছিল, সেই ম্যাচে পর্তুগাল হেরেছিল ২-০ গোলে।

ক্লাব ও জাতীয় দলে ৮৯৫ গোলের অবিশ্বাস্য রেকর্ডধারী রোনালদো পেনাল্টি মিস করলেও ইউরো থেকে ছিটকে পড়েনি পর্তুগাল মূলত গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তার অতিমানবীয় নৈপুণ্যে। পর্তুগিজ এই গোলরক্ষক টাইব্রেকারে স্লোভেনিয়ার নেওয়া তিনটি শটই রুখে দিয়েছেন। বিপরীতে ম্যাচের সময় রোনালদোর পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেওয়া ইয়ান ওবলাক পারেননি একটিও।

পেনাল্টি মিস সত্ত্বেও দল যে আস্থা হারায়নি তার ওপর সে প্রমাণ মিলেছে টাইব্রেকারে প্রথম শট রোনালদো নেওয়ায়। মুহূর্তে ভেঙে পড়া রোনালদো কীভাবে ফিরে আসেন, সে প্রমাণ দিয়েছেন তিনি টাইব্রেকারে লক্ষ্যভেদ করে। এরপর বাকি দুই গোল করেন ব্রুনো ফের্নান্দেস আর বার্নাদো সিলভা। গোল করে তৃপ্তির হাসি হেসেছেন, কান্না থেকে উত্তরণের হাসি।

পেনাল্টি মিসে খাদের কিনারে দলের চলে যাওয়া সত্ত্বেও পুরো ১২০ মিনিট এই মহাতারকার ওপর আস্থা রেখেছিলেন কোচ রবের্তো মার্তিনেস। গোলের জন্যে হাহাকার, হতাশা, কান্না সবগুলো দেখেছেন তিনি ইতিবাচকভাবেই। ম্যাচ শেষে বললেনও তাই। ক্রিশ্চিয়ানো আমাদের জন্য উদাহরণ। অসাধারণ তার আবেগের প্রকাশ। আশপাশে কী হচ্ছে এটা পাত্তা দেওয়ার তার দরকার নাই। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, টাইব্রেকারে প্রথম শটটি তাকেই নিতে হবে এবং আমাদেরকে জয়ের পথ দেখাতে হবে…।

কাতার বিশ্বকাপে তৎকালীন কোচ ফের্নান্দো সান্তোসকে পাশে পাননি রোনালদো। ইউরোতে এসে কোচ রবের্তো মার্তিনেসকে পাশে পাচ্ছেন তিনি।

আগামী ৬ জুলাই কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে পর্তুগাল। স্লোভেনিয়ার চাইতে কঠিন প্রতিপক্ষ ফ্রান্স। শেষের শুরুতে থাকা ঊনচল্লিশের রোনালদোর ইউরো ও জাতীয় দলের যাত্রার সমাপ্তি নাকি সম্ভাবনার, উত্তর মেলানোর দিন!

এ সম্পর্কিত আরও খবর