‘আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করিনি’

ক্রিকেট, খেলা

স্পোর্টস রিপোর্টার, বার্তা২৪.কম | 2024-11-12 15:48:56

টেস্ট ক্রিকেটে দেখতে দেখতে ২৪ বছর পার করে ফেলল বাংলাদেশ দল। সেই ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর পথচলা শুরু। ভারতের বিপক্ষে সেই অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশ দলে ছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি এখন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক এতো বছর পর এসে মানলেন টেস্টে বাংলাদেশ ভাল করতে পারেনি।

অভিষেক টেস্টের স্মৃতিচারণ ছাড়াও পুরো দুই যুগের পথচলা নিয়ে কথা বললেন বাশার। এই ক্রিকেটারের সেই মূল্যায়ন তুলে ধরা হলো বার্তা২৪.কম-এর পাঠকদের জন্য।

‘‘গত চার পাঁচ বছর ধরে ১০ নভেম্বর এলেই প্রতিবারই আমাকে একটা কমন প্রশ্ন শুনতে হয়-বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে কতখানি এগুলো? আসলে এই প্রশ্নের মধ্যেই উত্তরটা লুকিয়ে আছে। যদি সত্যিই অনেক অনেক দূর এগিয়ে যেতাম আমরা তাহলে এই প্রশ্নটা তো শোনার কথা নয় আমার।

বাস্তবতা হচ্ছে আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করিনি। হ্যাঁ, কিছুক্ষেত্রে হয়তো আগে আমরা যেটা করতে পারিনি, এখন সেটা করতে পারছি। যেমন এখন টেস্টেও আমরা দেশের বাইরে মাঝেমাঝে ম্যাচ জিতছি। শক্তিশালী কয়েকটি টেস্ট দলের বিরুদ্ধে ভালো কিছু টেস্ট ম্যাচ জিতেছি আমরা। সিরিজও জিতে এসেছি। তবে সার্বিক অবস্থা নিয়ে যদি আমাকে বলতে বলেন তাহলে আমি বলবো টেস্ট ক্রিকেটে এখনো আমাদের পায়ের নিচের মাটি শক্ত হয়নি। এখনো আমরা স্ট্রাগলিং দল হিসেবেই রয়ে গেছি। যেটা সময় এবং অভিজ্ঞতার বিচারে যেটা আমাদের হওয়ার কথা নয়।

আমরা যখন ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেট শুরু করি তখনো কিন্তু আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট ছিল মূলত ওয়ানডে ক্রিকেট ভিত্তিক। আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বললে প্রিমিয়ার ক্রিকেটই ছিল আমাদের মুল ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ। এখন এই দুই যুগ পরেও আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। আমরা সবাই তৈরিই হয়েছিল ঐ একটা চিন্তা নিয়ে যে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রিমিয়ার লিগ খেলবো। এখন নতুন যারা আসছে তারাও এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। আমি নিজে ঘরোয়া ক্রিকেট লিগে বড় দৈর্ঘ্যরে ম্যাচ খেলেছি খুলনা বিভাগের হয়ে। সে সময় আমার খেলোয়াড়দের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার জন্য মটিভেট করতে হতো। তাদেরকে বলতাম এখানে তুমি ভালো খেললে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে ভালো দল পাবে।

এই ক্রিকেট্ কনসেপ্ট কিন্তু টেস্ট খেলুড়ে অন্যান্য দেশে নেই। তাদের প্রথম থেকেই প্রধান কনসেপ্ট প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট হলো টেস্ট ক্রিকেট খেলার শুরুর জায়গা। সুখের বিষয় হলো পেছনের তিন চার বছর ধরে আমাদের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের প্রতিও ক্রিকেটাররা অনেক বেশি সিরিয়াস। তবে শুরু থেকে আমরা এটাকে তেমন গুরুত্ব দেইনি। মূলত এই কারণেই টেস্ট ক্রিকেটে এখন আমাদের যেখানে দাড়িয়ে থাকা উচিত ছিল সেখানে নেই।

দুই যুগ আগে খেলা সেই প্রথম টেস্টের প্রতিটি মুহূর্তের সবকিছুই আমার মনে আছে। আমার তো সেই টেস্টে খেলারই কথা ছিল না। স্কোয়াড সংখ্যা বাড়িয়ে আমাকে দলে নেওয়া হলো। একাদশে খেলবো কিনা, তখনো নিশ্চিত ছিলাম না। তারপর সুযোগ পেলাম। আমরা প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান করলাম। সেই ম্যাচ আমাদের আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছিল।

প্রথম ইনিংসে আমরা ৪০০ রান করার পর সবাই ধরেই নিলো আমরা টেস্ট ম্যাচ জিতে যাচ্ছি। পুরো ড্রেসিংরুম সেই ইনিংসের পর লোকে ভরে গেল! কিন্তু টেস্ট ম্যাচ যে পাঁচদিনের পরিশ্রম, এখানে যে দ্বিতীয় ইনিংস বলেও কিছু আছে সেটা যেন মনে ছিল না। তাই সেই শিক্ষাটা আমাদের হয়ে গিয়েছিল প্রথম টেস্টেই। আমরা আসলে সবাই একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। টেস্ট ক্রিকেট খেলছি। আমি নিজেকে টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে পরিচয় দিতে পারবো-এটা অনেক বড় এবং ভিন্ন একটা ব্যাপার ছিল।

আমরা প্রথম ইনিংসে ৪০০ রানের আনন্দে ভেসেছিলাম। আবার দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯০ রানে অলআউট হয়ে কঠিন বাস্তবতায়ও ফিরেছিলাম।’’

এ সম্পর্কিত আরও খবর