কাতার শুধু আক্রমণ করবে। আর বাংলাদেশ শুধুই ঠেকাবে। বাংলাদেশ-কাতারের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের এই ম্যাচে এমন দৃশ্যই বেশি দেখা যাবে, যেন এমন চিন্তাই ছিল। তবে এই ম্যাচের সমীকরণ অমন কিছু হয়নি। ম্যাচ ২-০ গোলে কাতার জিতলেও বাংলাদেশ যা করেছে তার নাম-লড়াই!
সেই লড়াইয়ে বাংলাদেশও গোল করার অন্তত তিনটি সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু কাতার পোস্টের কাছে নার্ভাসনেসটাই যেন পেয়ে বসে বাংলাদেশের ফুটবলারদের! তাতেই গোলের বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশ রক্ষণ নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শেষের দিকে ৬৯ থেকে ৭৩ এই চার মিনিটে গোল করার তিনটি সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। আর তাতেই শুধু ম্যাচে ফেরার নয়, জয়ের সুযোগও হাতছাড়া করে স্বাগতিকরা।
র্যাঙ্কিং, শক্তি এবং ফেভারিট তত্ত্ব¡ সবকিছু মিলিয়ে কাতার এই ম্যাচে হট ফেভারিট ট্যাগ নিয়েই নেমেছিল। জিতেছে তারাই। ম্যাচের ২৮ মিনিটের সময় প্রথম গোল পায় কাতার। দ্বিতীয় গোল করে তারা অতিরিক্ত সময়ে। দুটো গোলের ক্ষেত্র তৈরি হয় বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের ভুল বোঝাবুঝিতে। দুটো গোলই পায় কাতার ছোট ডি বক্সের ভেতর থেকে। এই দু’বারই বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশের রক্ষণভাগ।
২৮ মিনিটে ম্যাচে প্রথম গোল করেন ইউসুফ আব্দুরিসাগ এবং ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে দ্বিতীয় গোল আসে কারিম বাউদিয়াফের পা ছুঁয়ে।
ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিট কাতার বা বাংলাদেশ দলের ফুটবল নয়, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রইলো খেলার মাঠ! বৃষ্টিতে-কাদায় পুরো মাঠের অবস্থা শোচনীয়। জায়গায় জায়গায় কালো কালো ছোপ পড়ে গেছে। বল আটকে যাচ্ছে কাদাপানিতে। দুই দলের ডাগআউট প্রান্তে মাঠের কিছু জায়গার এমনই বেহাল অবস্থা যে দেখে বোঝার উপায় নেই এটা ফুটবল খেলার মাঠ নাকি ধানক্ষেত!
নিরপেক্ষ বিচারে এমন মাঠ আর্ন্তজাতিক ফুটবলের জন্য কোনোমতেই গ্রহণীয় নয়। জায়গায় জায়গায় ঘাস উঠে মাটি বেরিয়ে পড়ছে। এমন পিচ্ছিল মাঠে ভারসাম্য রাখা কঠিন। বড় ধরনের ইনজুরির আশঙ্কা থাকে। প্রথমার্ধের বিরতির সময় উভয় দল যখন মাঠ ছাড়ছে তখন সব খেলোয়াড়দের জার্সি কাদাপানিতে একাকার। কাদামাঠে যেন কুস্তি করে আসা দল!
কাদাজলে একাকার হয়ে উঠা এমন মাঠে খেলার অভ্যাস নেই কাতারের। কিন্তু তারপরও তারা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালালো বেশ। ছোট পাসে পজিশন ধরে রেখে খেলল। বলের নিয়ন্ত্রণ যাতে বেশি না হারায় সেই চেষ্টা চালাল। বেশি দৌড়ে শক্তি খরচ করল না। প্রথমে পরিস্থিতি বুঝল। তারপর কৌশল বদলে সামনে বাড়ল। মাঝলাইন বরাবর দুই ডিফেন্ডারকে রেখে পুরো দলই উপরে উঠে এলো। কখনো মাঝখান থেকে আবার কখনো উইং দিয়ে আক্রমণ সাজাল। তবে কর্দমাক্ত মাঠ কাতারের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের কাজ কিছুটা কঠিন করে দিল। তাল সামলে দৌড়ানো এবং কাদায় আটকে যাওয়া বল, সেই সঙ্গে ডি বক্সে দাঁড়ানো বাংলাদেশের ছয়জন খেলোয়াড়-এই জটিলতায় পড়ে শুরুর অর্ধে মাত্র একগোল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় কাতারকে।
ম্যাচের বেশিরভাগ সময় আক্রমণেই ছিল কাতার। তবে যাকে বলে একেবারে তেড়েফুঁড়ে প্রতি মুহূর্তেই আক্রমণে থাকা- তেমন তেজ দেখায়নি কাতার। এমন মাঠে দম ফুরালে বড় বিপদ হতে পারে-এটা জেনেই কাতার এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বাকি সময়টায় বিকালে পার্কে বেড়িয়ে আসার ভঙ্গিতে হেলদোল স্টাইলের ফুটবল খেলে!
যেখানে গোলের সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে বল নিজেদের পায়ে রাখার চেষ্টাই ছিল বেশি।