এক বছর ক্রিকেট মাঠে দেখা যাবে না সাকিব আল হাসানকে। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব তিনবার পেয়েও আইসিসি কিংবা বিসিবিকে জানান নি এই অলরাউন্ডার। এ কারণে আইসিসি দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ অধিনায়ককে। যার মধ্যে আছে এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। টানা এক বছর বাংলাদেশ অধিনায়ক থাকবেন না ক্রিকেট মাঠে। এমন খবরে অন্য অনেকের মতো হতাশ মাশরাফি বিন মর্তুজা।
প্রিয় সতীর্থদের জন্য মন পুড়ছে মাশরাফির। ওয়ানডে অধিনায়ক মঙ্গলবার রাতে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এনিয়ে লিখলেন আবেগঘন স্ট্যাটাস। যেখানে সতীর্থদের জন্য বিনিদ্র রাত কাটানোর কথাও বললেন ম্যাশ।
ওয়ানডে অধিনায়ক লিখেছেন, 'দীর্ঘ ১৩ বছরের সহযোদ্ধার আজকের ঘটনায় নিশ্চিতভাবেই কিছু বিনিদ্র রাত কাটবে আমার। তবে কিছুদিন পর এটা ভেবেও শান্তিতে ঘুমাতে পারব যে, তার নেতৃত্বেই ২০২৩ সালে আমরা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলব। কারণ নামটি তো সাকিব আল হাসান...!!!'
সব ধরণের ক্রিকেটে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ সাকিবের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার আরেক সতীর্থ মুশফিকুর রহিমও। মাশরাফির মতো তারও বিশ্বাস আরও বেশি দাপট নিয়েই ফিরবেন প্রিয় সতীর্থ। মুশফিক তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেছেন, 'আমরা ১৮ বছর ধরে এক সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলেছি। এটা খুবই দুঃখজনক তোমাকে (সাকিব) ছাড়া মাঠে নামতে হবে। আমি আশা করি, সাকিব বীরের মতো ফিরে আসবে। তোমার জন্য আমার এবং পুরো বাংলাদেশের সমর্থন থাকবে। শক্ত থাকো। ইনশা আল্লাহ।’
সাকিব আল হাসানের নিজের কণ্ঠেও ফেরার প্রত্যয়। তিনি মঙ্গলবার নিষেধাজ্ঞা শুনে মিরপুর বিসিবি কার্যালয়ে আসেন। বিমর্ষ এই মহাতারকা বলেন, ‘আমি শাস্তি মেনে নিয়েছি। সকল খেলোয়াড়ের মতো আমিও চাই ক্রিকেটটা দুর্নীতিমুক্ত থাকুক। তরুণদের উন্নয়নে আমি কাজ করব। আপনারা আমাকে যেভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন, সেভাবে সাপোর্ট দিয়ে যাবেন, তাহলে আমি দ্রুত ক্রিকেটে ফিরে আসতে পারব।'
সাকিবের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। এর চেয়ে বেশি মর্মান্তিক কিছু হতে পরে বলে আমার জানা নেই। কারণ আমি বহুবার বলেছি, দুজন খেলোয়াড়ের বিকল্প আমাদের নেই। একজন অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি, অন্যজন সাকিব। আমি মনে করি আমাদের সকলকে সাকিবের পাশে এখন থাকা উচিত। ওর এখন খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। ভেঙে পড়ার কোনো কারণ নেই। ও অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের সঙ্গে সহযোগিতা করার কথা বলেছে। সেটা করে যাক এবং যেভাবে যখন যেভাবে সাপোর্ট করা দরকার বিসিবি ওর পাশে থাকবে।’
গত দুই বছরে তিনবার একজন চিহ্নিত ক্রিকেট জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পান সাকিব। তখন সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেন তিনি। তবে জুয়াড়ির কাছ থেকে এই প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়ে তিনি আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট (আকসু) কে জানাননি। এটাই তার বড় ভুল। আর সেই ভুলের ফাঁদে পড়েই আজ ক্রিকেট দুনিয়ায় নিষিদ্ধ হলেন সাকিব।
বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্ছ সংস্থা আইসিসির কোড অব কনডাক্টে আছে-অনৈতিক প্রস্তাব লুকোনোও বড় অপরাধ। সেটিই করেছেন টাইগারদের অধিনায়ক। যার মাশুল দিয়ে এখন ক্রিকেটেরই বাইরে চলে গেলেন দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই তারকা!
আরও পড়ুন-