আশরাফুল সুযোগ-সমর্থন চান, দয়া-দাক্ষিণ্য নয়!

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 19:38:29

স্বপ্ন দেখতে ভালবাসেন মোহাম্মদ আশরাফুল।

সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই তিনি বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক প্রথমের নায়ক। অনেক বড় ম্যাচের ‘ম্যাচ উইনার’। তার ব্যাটের দ্যুতিতেই বিশ্ব চিনেছিল বিজয়ী বাংলাদেশকে। শুনেছিল ক্রিকেট মাঠে বাঘের গর্জন!

আশরাফুলই ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম পোস্টার বয়, ওয়ান্ডার বয়, নায়ক। এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে পাতানো ম্যাচের কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে একই সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় খলনায়কও সেই তিনি।


আরও পড়ুন, আশরাফুলের চোখে বিশ্বকাপে ফেরার স্বপ্ন


নিষ্ঠুর বাস্তবতা তাই!

ক্রিকেট ক্যারিয়ারের স্বপ্নিল শুরুর পথ এবং সেই স্বপ্নালু সফরের মাঝপথে এসে অসৎ সঙ্গের লোভ -পাপের পঙ্কিলতায় গলাপর্যন্ত ডুবে যাওয়া- জীবন চিত্রের ভাল-মন্দের দুটো দিকই দেখা হয়ে গেছে তার। ক্রিকেট তাকে পুরস্কৃত করেছে। তিরস্কৃতও কমকিছু করেনি। লোভ করেছিলেন। হারিয়েছেন  লাবন্য। ক্রিকেট লাবন্য!

অপরাধ স্বীকার করেছেন। শাস্তি হয়েছিল। মেনে নিয়েছেন। নিষিদ্ধ ছিলেন। আর্ন্তজাতিক সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হল। এবার শুরু নতুন লড়াই। ফিরে আসার লড়াই। তবে ৩৪ বছর বয়সে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ‘দ্বিতীয় ইনিংস’ শুরুর স্বপ্ন দেখা এই আশরাফুল এখন একটু বেশি সাবধানী। ভালই জানেন-নিজের জন্য নতুন পথ তাকে নিজেই তৈরি করতে হবে। সেভাবেই নিজেকে তৈরিও করছেন আশরাফুল। তাড়াহুড়ো তেমন নেই। তবে যা আছে তার নাম- চোয়াল শক্ত দৃঢ়তা!

আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ফেরার প্রাথমিক শর্ত কি সেটা আশরাফুলের অজানা কিছু নয়। জানেন শতভাগ ফিটনেস এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে অসামান্য- অসাধারণ পারফরমেন্স ছাড়া আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে তার ফেরার দ্বিতীয় কোন উপায় নেই। এবং সেই ফেরা যে খুব সহসাই সম্ভব নয়-সেটাও তার জানা। আর তাই এই মূহূর্তের নয়, একটু দুরের সময়ের জাতীয় দলে নিজের ফিরে আসার চিন্তা ও পরিকল্পনা তার।


আরও পড়ুনএই মুহূর্তে নির্বাচকদের চিন্তায় নেই আশরাফুল!


এই যে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন বললেন-‘এই মূহূর্তে জাতীয় দলে আশরাফুলের জন্য কোন জায়গা নেই’-এই বাস্তবতার সঙ্গে আশরাফুলও খুব একটা দ্বিমত করছেন না। তবে ফিরে আসার লড়াইয়ের জন্য কিভাবে নিজেকে পুরোদুস্তর তৈরি করা যায় সেই লড়াইয়ে নেমেছেন আশরাফুল এখন। তাকে নিয়ে করা প্রধান নির্বাচকের মন্তব্য অনলাইনে দেখেছেন তিনি।

এই প্রসঙ্গে রোববার রাতে লন্ডন থেকে আশরাফুল বার্তা২৪.কম কে জানান-‘ফিটনেস নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই এখন। আমি আগের যে কোন সময়ের চেয়ে ফিট। ব্যাটিং নিয়ে নিবিড় অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি। এই মূহূর্তে দেশে ঘরোয়া কোন ক্রিকেটের খেলা নেই, নইলে নিজেকে প্রমাণের একটা সুযোগ পেতাম আমি। অক্টোবরে জাতীয় লিগ আছে। সেই লিগে ভাল কিছু করার একটা চেষ্টা অবশ্যই থাকবে আমার, ইনশাল্লাহ!’

এই ফিরে আসার লড়াইয়ে সবার সমর্থন চাইছেন আশরাফুল। ফিরতে চান স্রেফ নিজের ক্রিকেটীয় যোগ্যতার গুণেই। কারো মেজাজ-মর্জি বা দয়া-দাক্ষিণ্যের কৃপায় নয়। আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক তারকা ক্রিকেটার ইউসুফ বাবুও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সেই কথাই লেখেন-‘ প্রধান নির্বাচক নান্নুর মন্তব্যটা দেখে আমি অবাক হয়েছি। এটা পরিস্কার দুরদৃষ্টির অভাব। কে না জানে, জাতীয় দলে একজন খেলোয়াড় শুধুমাত্র তার পারফরমেন্সের ভিত্তিতেই জায়গা পায়। আশরাফুলেরও এটা বেশ ভালই জানা। আশরাফুলকেও সুন্দর শুরুর একটা সুযোগ করে দিতে হবে। কিন্তু প্রধান নির্বাচকের মতো দায়িত্বশীল ও ক্ষমতাবান পদে থাকা একজনের কাছ থেকে এমনসব ঢালাও নেতিবাচক মন্তব্য কোনমতেই আসা উচিত নয়। এই নির্বাচক কমিটি দ্বৈত নীতির অনেক উদাহরণ তৈরি করেছে। সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমানের দলে অর্ন্তভুক্তিই তো প্রমাণ! আশরাফুল যদি পারফরমেন্স দেখাতে পারে তবে দলে তাকে জায়গা দেয়ার মতো অনেক ক্ষেত্র আছে। তাকে যথেষ্ট শাস্তি দেয়া হয়েছে এবং সে একাই শাস্তি ভোগ করেছে। এখন ক্রিকেট সার্কেলে ফিরে আসার জন্য একটা অবাধ ও সুন্দর সুযোগ চাই তার।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর