নিজের মতামত, মন্তব্য এবং সিদ্ধান্ত জানাতে কখনোই পিছপা হন না মাইকেল হোল্ডিং। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ক্রিকেট গ্রেট পৃথিবী জুড়ে বর্ণবাদের যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে তারই পরিষ্কার বর্ণনা তুলে ধরেছিলেন সাউদাম্পটন টেস্টের প্রথম দিন। বৃষ্টিতে এদিন খেলা বন্ধ ছিল। সেই সময় টিভিতে বর্ণবাদ প্রসঙ্গে আলোচনায় হোল্ডিং বলেন- ‘বর্ণবাদ আসলে জন্মায় না। এটা শেখানো হয়। গায়ের রংয়ের এই বিভেদের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে একমাত্র উপায় হলো প্রকৃত শিক্ষা। একমাত্র সঠিক এবং প্রকৃত মানবিক শিক্ষাই পারে মানুষের তৈরি বর্ণবাদের শিকল থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে।’
সেদিনের ৪ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের হোল্ডিংয়ের সেই ভিডিও বার্তা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কড়া এক চাবুক! কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটা নেট দুনিয়ায়ও ভাইরাল হয়ে পড়ে।
হোল্ডিং সেদিন যা বলেছিলেন সেটা তার জীবন থেকে শেখা। জীবন থেকেই নেওয়া। খেলোয়াড়ি জীবনে হোল্ডিংকে হয়তো বর্ণবাদের শিকার হতে হয়নি। কিন্তু জন্মের পর থেকেই তো তিনি দেখে আসছেন এই বিভেদের ভাগাভাগি। তুমি কালো, আমি সাদা- এই ভেদাভেদ।
সাউদাম্পটন টেস্টের পরদিন স্কাইনিউজ টিভিতে এনিয়ে আরেকবার মুখোমুখি হয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফাস্ট বোলার। কিন্তু সরাসরি সেই অনুষ্ঠানে নিজের আবেগ চেপে রাখতে পারেননি হোল্ডিং। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কষ্টের কান্নায়। বর্ণবাদীরা তার বাবা-মায়ের প্রতি যে নিষ্ঠুর আচরণ করেছিল সেই দুঃস্মৃতির কথা মনে করে আবেগে তার দুচোখ গড়িয়ে জল নামে।
স্কাইনিউজ টিভির মার্কের সঙ্গে মাইকেল হোল্ডিংয়ের সেই ১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের কথা-বার্তাটা ছিল পুরোপুরি এ রকম-
মার্ক: সেদিন বৃষ্টিতে খেলা বন্ধের ফাঁকে বর্ণবাদ নিয়ে তোমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তোমাকে কিছুটা আপসেট মনে হয়েছিল। টিভিতে লাইভ অনুষ্ঠানে ক্রিকেট ম্যাচের সময় এমন আবেগময় বিষয়ে কথা বলাটা কেমন কঠিন ছিল?
মাইকেল হোল্ডিং: সত্যি বলতে কি ওই বিষয়ে কথা বলতে যখন শুরু করেছিলাম তখন মনে ও চিন্তা জুড়ে আমার বাবা-মা’র কথা মনে পড়ছিল। সেই স্মৃতি এই এখন যে তোমার সঙ্গে কথা বলছি, তখনো আমার হৃদয়জুড়ে (এই সময় হোল্ডিং কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করেন)। মার্ক আমি জানি আমার বাবা-মা’কে কি সমস্যা কি কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে (অবরুদ্ধ কান্না গলায় ধরে আসে হোল্ডিংয়ের)।
মার্ক: আমরা বুঝতে পারছি মাইকেল, তুমি খানিকটা সময় নাও।
খানিকক্ষণ কান্নার আবেগ ঠেকিয়ে রেখে মাথা তুলে মাইকেল হোল্ডিং ফের বলতে শুরু করেন। তবে কান্নার ধমক একসময় ঠিক বল্গাহারা হয়ে পড়ে।
মাইকেল হোল্ডিং: আমার মায়ের পরিবার এক সময় তার সঙ্গে কথাবার্তা পর্যন্ত বলতে বন্ধ করে দেয়। কারণ আমার মা বিয়ে করেছিল এমন একজনকে যার গায়ের রং বেশিই কালো ছিল! আমি জানি তারা সেসময় কি দুঃসময়, কি অসহীয় অবস্থা ও পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল। তাদের সেই দুঃস্মৃতিগুলো কষ্টের সময়গুলো আমার মনে পড়েছিল (দু’চোখ গড়িয়ে নেমে আসা জল হাতের তালুর পিঠ দিয়ে মুছলেন হোল্ডিং)।
মার্ক: তোমার আবেগ বুঝতে পারছি মাইকেল, তোমাকে ধন্যবাদ। যেমনটি তুমি বলেছে, পরিবর্তনের এখনই সময়।
মাইকেল হোল্ডিং: আমিও সেটাই আশা করছি মার্ক। আমিও চাই বর্ণবাদের মানসিকতায় বদলটা আসুক। এই পরিবর্তনের গতিটা ধীরে হোক বা শামুকের গতিতে হোক, শিশুর প্রথম পদক্ষেপের মতো হোক- তারপরও যেন গতিটা অব্যাহত থাকুক। আশায় আছি পরিবর্তনের গতিটা যেন সঠিক পথেই চলে।
মার্ক: ধন্যবাদ মাইকেল, কঠিন এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য।
মাইকেল হোল্ডিং: ধন্যবাদ।