১৯৯৭ সালে রচিত উপন্যাসের জন্য পরের বছর ম্যান বুকার পুরস্কার পেয়ে আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন উত্তরপূর্ব ভারতের হিলটাউন শিলং-এ জন্মগ্রহণকারী অরুন্ধতী রায় (২৪ নভেম্বর ১৯৬১)। পুরস্কারপ্রাপ্ত উপন্যাস 'দ্য গড অব স্মল থিংস' কিন্তু উত্তরের পাহাড়ের কাহিনী নয়, দক্ষিণের সমুদ্র তীরবর্তী জনপদের জেলে জীবনের আখ্যান।
বাঙালি বাবা এবং সিরিয়ান-খ্রিস্টান মায়ের সন্তান অরুন্ধতীর শৈশব-কৈশোর দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে বসবাসের অভিজ্ঞতায় রচিত উপন্যাসটি আরোহন করে খ্যাতির শীর্ষে। আর তিনি কেবল একজন লেখিকার মর্যাদাই পাননি, পেয়েছিলেন সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো একজন অ্যাক্টিভিস্টের ইমেজও। সেই ভাবমূর্তি তিনি অক্ষুন্ন রেখেছেন বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই ইত্যাদির মাধ্যমে এবং পরবর্তী সকল রচনাতেও।
একজন রাজনৈতিক সচেতন ও সামাজিক বিষয়ে সোচ্চার লেখক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া অরুন্ধতী রায়ের প্রতিটি বইয়ের প্রতিই সাধারণ পাঠকের আলাদা আকর্ষণ থাকে। ফলে তাঁর নতুন বই 'আজাদি'ও রয়েছে সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে।
নতুন বইয়ের নামকরণ নিয়ে অরুন্ধতী রায়ের ব্রিটিশ প্রকাশক তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, অরুন্ধতীর কাছে ‘আজ়াদি’ শব্দের মর্মার্থ কী? উত্তরে সংক্ষেপে তিনি বলেন, ‘একটি উপন্যাস।’ উত্তরটি দেওয়ার সময় অরুন্ধতী বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। যে ব্যাখ্যা তিনি আলাদাভাবে দিয়েছেন বইয়ে।
"আজ়াদি' বা স্বাধীনতার মানে উপন্যাস অর্থে হতে পারে 'লেখকের স্বাধীনতা'। এবং আরো বেশি কিছু। অরুন্ধতী লিখছেন, ‘...a novel gives a writer the freedom to be as complicated as she wants— to move through worlds, languages, and time, through societies, communities and politics. A novel can be endlessly complicated, layered, but that is not the same as being loose, baggy, or random. A novel, to me, is freedom with responsibility. Real, unfettered Azadi— freedom.’
সাধারণভাবে লেখকের এবং বিশেষভাবে মানুষের স্বাধীনতার নিরিখে অভিনব, সতেজ ও বহুমাত্রিক ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে অরুন্ধতী রায়ের কণ্ঠে। ঝরঝরে তরতরে ভাষায় গল্প বলার সঙ্গে সঙ্গে দার্শনিক বোধের সঞ্চালন তাঁর লেখার প্রধান শৈলী, যা, সমালোচকদের ভাষায় 'আবারো প্রমাণ করেছেন তিনি নতুন বইয়ে', যার পূর্ণ শিরোনাম 'আজ়াদি: ফ্রিডম ফ্যাসিজ়ম ফিকশন'।
সদ্য-প্রকাশিত বইয়ে সংগৃহীত ন’টি প্রবন্ধের সবক’টিই ২০১৮-২০২০ সময়পর্বে রচিত। প্রথম প্রবন্ধটি ২০১৮ সালে ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে ‘ডব্লিউ জি সেবল্ড লেকচর অন লিটরারি ট্রান্সলেশন’ হিসেবে পঠিত। শেষ প্রবন্ধটির নাম ‘দ্য প্যান্ডেমিক ইজ় আ পোর্টাল’, বিষয় অবশ্যই কোভিড মহামারি। ফলে বইয়ের বিষয়বস্তু একদিক দিয়ে দার্শনিক এবং অন্যদিক দিয়ে খুবই সমকালীন এবং বৈশ্বিক।
মহামারি, বিশেষত করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর আক্রমণে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত কোভিড-১৯ সম্পর্কে অরুন্ধতী রায় এক স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ উন্মোচিত করেছেন। মহামারি নিয়ে রচিত লেখায় তিনি জানাচ্ছেন, ‘Coronavirus has brought with it another, more terrible understanding of Azadi: the Free Virus that has made nonsense of international borders, incarcerated whole populations and brought the modern world to a halt like nothing else ever could...As we pass through this portal into another kind of world, we will have to ask ourselves what we want to take with us and what we will leave behind.’
মহামারিকালে আজাদি, ফ্রিডম, স্বাধীনতা প্রত্যয়টিকে সামনে রেখে আত্মসমালোচনায় জারিত হয়েছেন তিনি। প্রশ্ন তুলেছেন জীবনের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি নিয়ে। বলেছেন, 'আমাদেরকে আমাদেরই এই কথা জিজ্ঞেস করতে হবে যে, আমরা আমাদের সাথে কি নিতে চাই এবং কি ছেড়ে দিতে চাই।' তাঁর অন্যান্য ফিকশন, নন-ফিকশন রচনার মতোই অরুন্ধতী রায়ের সাম্প্রতিক গদ্যগ্রন্থ 'আজ়াদি: ফ্রিডম ফ্যাসিজ়ম ফিকশন' পাঠককে, মানুষকে ভাবতে বাধ্য করছে জীবন ও জীবনবোধ সম্পর্কে। সঙ্কটে, মহামারিতে নিবিড়ভাবে তাকাতে প্রণোদিত করছে নিজের দিকে, নিজের জীবনের গূঢ়তম মর্মার্থের দিকে।