শতবর্ষে নজরুল সঙ্গীতের দীপালি নাগ



জি এম আবু বকর
শতবর্ষের দীপালি নাগ। ছবি: বার্তা২৪.কম

শতবর্ষের দীপালি নাগ। ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

 

মেঘ মেদুর বরষায়-নজরুলগীতি রেকর্ড হবার পর দীপালি নাগের খ্যাতি গানের জগতে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি গানের জগতে রাতারাতি স্টার-এ পরিণত হন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে আগ্রা ঘরানার বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি অর্জন করেছিলেন তিনি। ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ সাহেবের কাছে শিখেছিলেন খেয়াল, ঠুঙরি, ভজন। সেকালে রেডিওর নব ঘোরালেই শোনা যেত দীপালি নাগের গান, যিনি স্পর্শ করেছেন শতবর্ষের ঐতিহাসিক মাইলফলক। দীপালি নাগের গৃহে ছিল সঙ্গীত চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ। বাড়ির অনেকেই গানবাজনা করতেন। পিতা কর্মসূত্রে পরিবার নিয়ে আগ্রায় থাকতেন।

দক্ষিণ কলকাতার 'শরৎ সমিতি' শরৎচন্দ্রের বাসভবনে আয়োজন করে বিদূষী দীপালি নাগের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এক মহতী স্মৃতিচারণ সভা। ২২.০২.২০২২. শুরু হয় এই গুণী সঙ্গীত শিল্পীর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা। নজরুল জীবন- সাহিত্য - সঙ্গীত চর্চার  প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের কান্ডারী সোমঋতা মল্লিককে একটি প্রত্যক্ষ ভূমিকায় দেখা গেল।

এদিনের সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন কাকলী সেন, দীপালি নাগ যাঁর গুরুমা ছিলেন। এই সভায় তাঁর একটি সিডি তিনি শরৎ সমিতির সম্পাদক ড. শ্যামল কুমার বসুর হাতে তুলে দেন। এতে নজরুল গীতি তিনি গেয়েছেন শ্রীমতি দীপালি নাগের নির্দেশনায়, পুরোনো দিনের গানের স্টাইল ও বৈভব বজায় রেখে। তিনি অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছিলেন এই প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত সাধিকাকে, যিনি জীবনে অকৃপণ ভাবে পেয়েছিলেন শ্রোতার ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।

দীপালি নাগ ছিলেন স্নেহময়ী গুরুমা, জীবনে সঠিক পথে চলার পরামর্শদাতা। বাড়িতে অতিথি এলে নিজের হাতে লুচি ও আলুরদম তৈরি করে খাওয়াতেন। অতীত দিনের সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব পন্ডিত জ্ঞান প্রকাশ ঘোষের সুযোগ্য পুত্র পন্ডিত মল্লার ঘোষও তাঁর অল্পবয়সের স্মৃতিচারণা করলেন। 'সপ্তসুর' নামে একটি সঙ্গীতায়ন গড়ে তুলেছিলেন দীপালি নাগ। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আঙিনায় তিনি অভিনব কোরাস অর্থাৎ বৃন্দগান রচনা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রয়াণের পর সেই উদ্যোগ থেমে গেছে। কাকলি সেনের অনুপ্রেরণায় 'পাঁচটি গানের গল্প' নামে দীপালি নাগের ওপরে একটি তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। 

কাজী নজরুল ইসলাম দীপালি নাগকে  প্রথম দেখেন ১৯৩৮ সালে। তিনি যখন শুনলেন দীপালি নাগ থাকেন আগ্রায়, তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন - তুমি বাংলা জানো? তারপর অনেক ইতিহাস তৈরি করেন দীপালি নাগ। তিনি নজরুলের মোট আঠারোটি গান  রেকর্ড করেছিলেন। দীপালি নাগের স্বামী ছিলেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী বি ডি নাগচৌধুরী (বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরী)। বাস করতেন বেহালায় তাঁদের সুসজ্জিত গৃহে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তারকাদের নিত্য যাওয়া আসা ছিল সেই আবাসে। দীপালি নাগ জীবনের শেষ বেলায় কলকাতা ছেড়ে আহমেদাবাদে পুত্রের আশ্রয়ে গিয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু যাবার দিনটি ছিল বৃষ্টিস্নাত কলকাতার একটি ধূসর দিন। গান্ধীনগরে শীঘ্রই তাঁর শেষ দিন ঘনিয়ে আসে। কিন্তু জীবন এমন নিষ্ঠুর যে সেদিনও দীপালি নাগকে শেষযাত্রায় যেতে হয়েছিল পুষ্পহীন শকটে।


বিদূষী দীপালি নাগের জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে সঙ্গীত জগতে বিশেষ হেলদোল দেখা যাচ্ছেনা, এটা বিস্ময়কর। তবে ছায়ানটের সভায় উপস্থিত ছিলেন চন্ডীগড়ের এক অনুরাগী সঙ্গীত

গবেষক ড.সঙ্গীতা লাহা চৌধুরী। কাজী নজরুল ইসলামের উপর গবেষণা করার সময় তিনি দীপালি নাগের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সেই সময়ে যে স্নেহ আর আতিথেয়তা

তাঁর ওপরে বর্ষিত হয়েছিল সেটাকে তিনি জীবনের এক পরম সঞ্চয় মনে করেন।

সভায় ছায়ানট কলকাতার পুরোধা সোমঋতা মল্লিক দীপালি নাগের জীবনের নানা অধ্যায় তুলে ধরলেন কাকলী সেনের গ্রন্থের নির্বাচিত অংশ পাঠের মাধ্যমে। বক্তা অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গীত জীবনের স্মৃতিচারণা করেন। সভায় সভাপতি ড. মনতোষ দাশগুপ্ত তাঁর সঙ্গে বাসন্তী দুলাল নাগ চৌধুরীর বন্ধুর সূত্রে শ্রীমতী দীপালি নাগের সংস্পর্শে এসেছিলেন পারিবারিক বন্ধু হিসেবে। তিনিও অনেক স্মৃতি রোমন্থন করেন।

এই সভাকক্ষে শ্রীমতী কাকলী সেন দীপালি নাগের পরিণত বয়সের একটি দুর্লভ জীবন্ত ছবি হাজির করেছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে। সেটির কথা আলাদা করে না বললেই চলে না। সভার শেষদিকে সুরের মূর্ছনা আনলেন সোমঋতা মল্লিকের পরিচালনায় তাঁর গোষ্ঠী ছায়ানটের গাওয়া দুটি সুখশ্রাব্য নজরুল গীতি পরিবেশন করে। পরিশেষে, মধুরেণ সমাপয়েৎ! দীপালি নাগের কণ্ঠে গান শোনা গেল পুরনো রেকর্ড থেকে। এই প্রতিবেদকের একবার সুযোগ হয়েছিল নাগদম্পতির ড্রয়িং রুমে ঘন্টা খানেক অবস্থান করার। প্রখ্যাত বিজ্ঞানীকে একটি বিজ্ঞান সভায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল আমার। সেই দিন মনে হয়েছে ওটা ড্রয়িং রুম নয়, একটি সাজানো গোছানো মিউজিয়াম। সেই গৃহটি এখন অবহেলার শিকার হয়ে পড়েছে। বক্তাদের সকলের কন্ঠে উদ্বেগের ছাপ। এই বিল্ডিংটাকে কি হেরিটেজ বিল্ডি হিসেবে ঘোষণা করা যায় না ?

   

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

'রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক'। বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তিনি ছিলেন উদার, অসাম্প্রদায়িক ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। কিশোরগঞ্জের সমাজ প্রগতি ও জনসেবায় তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মরণোত্তর সম্মাননা পদক প্রদানকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবী নূরজাহান বেগমকে ১ম শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী অষ্টবর্গ শাহ্ বাড়িতে নবনির্মিত নান্দনিক স্থাপত্য শাহ্ মাহ্তাব আলী কালচারাল কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের পক্ষে তাঁর বড় ছেলে, মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বার্তা২৪.কম এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর ড. মাহফুজ পারভেজ পদক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘জীবনের ধ্রুবতারা: আমার মা নূরজাহান বেগম ও কিশোরগঞ্জের স্মৃতি’ শীর্ষক পাবলিক লেকচার প্রদান করেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার। এতে পদক প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. গোলাম হোসেন।

এতে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সি‌নিয়র আইনজীবী বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা না‌সির উ‌দ্দিন ফারুকী, সিনিয়র আইনজীবী, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রির সাধারণ সম্পাদক মু আ ল‌তিফ, সি‌নিয়র সাংবা‌দিক আলম সা‌রোয়ার টিটু, সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম, ফ্রন্টিয়ার্স রিপোর্টার্স সোসাইটির সভাপতি মিনহাজ শিহাব ফুয়াদ, সমাজকর্মী লুৎফু‌ন্নেছা চিনু প্রমুখ। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সমাজসেবী নূরজাহান বেগমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন কীর্তির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ করছে।

এছাড়া সমাজসেবী নূরজাহান বেগম বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি এই মহীয়সী নারী পরলোকগমন করেন। তাঁর কর্ম ও স্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্য শাহ্ মাহ্তাব আলী ফাউন্ডেশন তাঁকে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করেছে।

;

‘প্রতিবন্ধী নারীদের বাধা দূর করতে একসঙ্গে সাইরেন বাজাতে হবে’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), অ্যারো ও সিএনএস এর যৌথ উদ্যোগে ‘প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা রোধ’ বিষয়ক একটি কর্মশালা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিআরইউ সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় বেলা ১১টায় ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

এ সময় তিনি বলেন, বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারীরা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারসহ শীর্ষ পর্যায়ে নারী ক্ষমতায় থাকলেও নারীরা এখনও তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এই নারীরাই যখন প্রতিবন্ধী হয় তখন তারা আরো নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন।


নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না এমন মন্তব্য করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, রাস্তাঘাটসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্ট থাকলেও মানুষের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের নিয়েও পর্যাপ্ত পরিমানে প্রকল্প নেই। আমার মনে হয়, রাষ্ট্র একটা ভুল মডেলের দিকে যাচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে একসঙ্গে বাঁশি এবং সাইরেনটা বাজাতে হবে, আওয়াজ এক সঙ্গে করতে হবে।

এসময় তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একটি সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে সরকার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ এগিয়ে আসলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্মশালাটিতে প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশ প্রকল্প সমন্বয় বিশেষজ্ঞ তুশিবা কাশেম মূল বিষয়ের উপরে আলোচনা করেন এবং অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়াও বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউ’র যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান ও কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য সোলাইমান সালমান, সুশান্ত কুমার সাহা, মো: আল-আমিন, এসকে রেজা পারভেজ ও মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ) উপস্থিত ছিলেন।

;

ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন

ইরানে আন্দোলনরত নারীদের সমর্থনে বিএনএসকে’র মানববন্ধন

  • Font increase
  • Font Decrease

ইরানি তরুণী মাহ্সা আমিনি’র মৃত্যুর ঘটনায় উপযুক্ত বিচার এবং দেশটিতে চলমান নারী নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকরা।

রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। একই সাথে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ ওই দেশে বিভিন্ন শহর ও বিশ্বব্যাপী চলমান আন্দোলনের সাথে তারা একাত্মতা পোষণ করেন।

ইরানে আন্দোলনরত নারী সমাজ ও জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করে সংগঠনের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ‘সঠিক উপায়ে হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানি তরুণী মাহ্সা আমিনীকে সম্প্রতি গ্রেফতার ও পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে পুরো ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে অজুহাতে ইরানে দীর্ঘদিন ধরে নারীরা এরকম নৃশংস জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, শত শত নারী কারাগারে দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন। ইরানের নারীরা ইরানের জনগণ এই জুলুম নির্যাতনের অবসান চায়। বাংলাদেশেও একটি গোষ্ঠী ধর্মের নামে মেয়েদের ওপর বিরাট বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। আমাদের এই বিষয়গুলোকে এভাবেই শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে।’

মানববন্ধনে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের দপ্তর সম্পাদক দিলরুবা খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহনাজ পারভীন এলিস, সদস্য আফরোজা সরকারসহ নারী সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন।

এসময় তারা পোশাকের জন্য নারীর ওপর খবরদাবি নারীর মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মানববন্ধন থেকে নারী ওপর এ ধরনের খবরদারি ও জুলুম-নির্যাতন বন্ধসহ মাসা আমিনী হত্যা ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করা হয়।

;

'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'

'আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ নয়'

  • Font increase
  • Font Decrease

"প্রথম বা আগের পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারবেন না মুসলমান পুরুষরা।"

বুধবার (১২ অক্টোবর) এ রায় জানিয়ে দিল এলাহাবাদ হাই কোর্ট। যুগান্তকারী রায়ের প্রসঙ্গে পবিত্র কোরানেরও উল্লেখ করেছে হাই কোর্ট।

মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানকে উদ্ধৃত করে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে জানায়, "আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানদের যত্ন না নিলে মুসলমানদের দ্বিতীয় বিবাহ করা ধর্মবিরুদ্ধ।" এলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি প্রকাশ কেশরওয়ানি এবং রাজেন্দ্র কুমার তাঁদের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, “যদি কোনও মুসলমান পুরুষ বুঝতে পারেন যে, তিনি আগের পক্ষের স্ত্রী সন্তানদের দায়িত্ব নিতে অক্ষম, তবে তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ করার ভাবনা থেকে সরে আসা উচিত।"

অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ধর্মীয় দিক থেকে উত্তেজক এই রায়ের প্রসঙ্গে আদালতের সাফ পর্যবেক্ষণ হলো, "ধর্মনির্বিশেষে কোনও পুরুষ যদি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তিনি প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারেন না।"

কিছু দিন আগেই উত্তরপ্রদেশ নিবাসী আজিজুর রহমান প্রথম পক্ষের স্ত্রীর কাছ থেকে দাম্পত্যের অধিকার দাবি করে আদালতের শরণাপন্ন হন। মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে প্রদত্ত রায়ে আদালত জানায়, "প্রথম পক্ষের স্ত্রীর অজান্তেই দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন ওই ব্যক্তি। তাই ওই ব্যক্তি প্রথম স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে কিংবা প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে দাম্পত্যের অধিকার দাবি করতে পারেন না।"

ভারতের বিচারালয় আগেও তিন তালাক, খোরপোশ ও হিজাব সম্পর্কে বিভিন্ন রায় দিয়েছে, যা নিয়ে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতণ্ডা ও বাদানুবাদ হয়েছে। তবে দ্বিতীয় বিয়ে প্রসঙ্গে দেওয়া আদালতের রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা কোনও প্রতিক্রিয়া জানায় নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রায়ের এক অংশে "ধর্মনির্বিশেষে কোনও পুরুষ যদি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তিনি প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারেন না" মর্মে উল্লেখ করায় তা কেবল মাত্র মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করে দেওয়া হয়েছে বলা যায় না। তদুপরি, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানকে উদ্ধৃত করে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে "আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানদের যত্ন না নিলে মুসলমানদের দ্বিতীয় বিবাহ করা ধর্মবিরুদ্ধ" উল্লেখ করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। সবকিছু মিলিয়ে নারীর অধিকার ও আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো সামনে চলে আসায় রায়ের ক্ষেত্রে ধর্মীয় আবেগের চেয়ে নারীর ক্ষমতায়নের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোই প্রাধান্য পেয়েছে।

;