২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নারী উন্নয়নে ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকার জেন্ডার বাজেট পেশ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ সংসদে বাজেট বক্তৃতায় এ প্রস্তাব করেন। এই বরাদ্দ গত অর্থবছরের তুলনায় ৩০ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা বেশি।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও ১৭ টি বিভাগের জন্য পৃথক জেন্ডার বাজেট উপস্থাপন করেন। বাজেট বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, নারী উন্নয়নে ক্রমাগত বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি নারী সমঅধিকার ও কল্যাণ সুনিশ্চিতকরণে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং সদিচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে।
“কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন” শীর্ষক এ বাজেটে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য মোট ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়। এটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ৫১তম বাজেট এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৩তম বাজেট।
আহম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের মোট বাজেটে জেন্ডার সম্পৃক্ত বাজেটের শতকরা হার ৩৩.৮৪। যা জিডিপি’র ৫.১৬ শতাংশ।
জেন্ডার বাজেটকে তিনটি থিমেটিক এরিয়ায় ভাগ করে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে যে, ‘সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধি’ খাতে সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর পরেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি’ খাত। এ খাতে নারী উন্নয়ন খাতের ৪১ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ‘উৎপাদন, শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ’ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ শতাংশ।
নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছয়টি মন্ত্রণালয় ও ছয়টি বিভাগের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এগুলো হলো, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
দ্বিতীয় অংশে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নয়টি মন্ত্রণালয় ও দুইটি বিভাগের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়,আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় , যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় , বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় , দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
জেন্ডার বাজেটের তৃতীয় অংশে সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হয়। এতে ১২ টি মন্ত্রণালয় ও ৯ টি বিভাগের জন্য জেন্ডার বাজেটের প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন, আইন ও বিচার বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রণালয় , তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় , সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় , সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সদ্য প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রথমবারের মত ৪টি মন্ত্রণালয়ের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রস্তাব করেন। ঐ বছর নারী উন্নয়নে বরাদ্দ ছিলো ২৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। পরবর্তীতে ২০১০-১১ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেটে ১০ টি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২০ টি মন্ত্রণালয়ে ৪২হাজার ১’শ ৫৪ কোটি টাকা, এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৫ টি মন্ত্রণালয়ে ৫৪ হাজার ৩’শ ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪০টি মন্ত্রণালয়কে অন্তুর্ভুক্ত করে জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করা হয়। এরপর ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেটে মোট ৪৩ টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য একাদশ বারের মতো জেন্ডার বাজেট উপস্থাপন করেন। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল আজ ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৪৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য চতুর্দশতম জেন্ডার বাজেট পেশ করেন।