"প্রথম বা আগের পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের যত্ন না নিলে দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারবেন না মুসলমান পুরুষরা।"
বুধবার (১২ অক্টোবর) এ রায় জানিয়ে দিল এলাহাবাদ হাই কোর্ট। যুগান্তকারী রায়ের প্রসঙ্গে পবিত্র কোরানেরও উল্লেখ করেছে হাই কোর্ট।
মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানকে উদ্ধৃত করে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে জানায়, "আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানদের যত্ন না নিলে মুসলমানদের দ্বিতীয় বিবাহ করা ধর্মবিরুদ্ধ।" এলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি প্রকাশ কেশরওয়ানি এবং রাজেন্দ্র কুমার তাঁদের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, “যদি কোনও মুসলমান পুরুষ বুঝতে পারেন যে, তিনি আগের পক্ষের স্ত্রী সন্তানদের দায়িত্ব নিতে অক্ষম, তবে তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ করার ভাবনা থেকে সরে আসা উচিত।"
অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ধর্মীয় দিক থেকে উত্তেজক এই রায়ের প্রসঙ্গে আদালতের সাফ পর্যবেক্ষণ হলো, "ধর্মনির্বিশেষে কোনও পুরুষ যদি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তিনি প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারেন না।"
কিছু দিন আগেই উত্তরপ্রদেশ নিবাসী আজিজুর রহমান প্রথম পক্ষের স্ত্রীর কাছ থেকে দাম্পত্যের অধিকার দাবি করে আদালতের শরণাপন্ন হন। মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে প্রদত্ত রায়ে আদালত জানায়, "প্রথম পক্ষের স্ত্রীর অজান্তেই দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন ওই ব্যক্তি। তাই ওই ব্যক্তি প্রথম স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে কিংবা প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে দাম্পত্যের অধিকার দাবি করতে পারেন না।"
ভারতের বিচারালয় আগেও তিন তালাক, খোরপোশ ও হিজাব সম্পর্কে বিভিন্ন রায় দিয়েছে, যা নিয়ে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতণ্ডা ও বাদানুবাদ হয়েছে। তবে দ্বিতীয় বিয়ে প্রসঙ্গে দেওয়া আদালতের রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা কোনও প্রতিক্রিয়া জানায় নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রায়ের এক অংশে "ধর্মনির্বিশেষে কোনও পুরুষ যদি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তবে তিনি প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারেন না" মর্মে উল্লেখ করায় তা কেবল মাত্র মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করে দেওয়া হয়েছে বলা যায় না। তদুপরি, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানকে উদ্ধৃত করে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে "আগের পক্ষের স্ত্রী, সন্তানদের যত্ন না নিলে মুসলমানদের দ্বিতীয় বিবাহ করা ধর্মবিরুদ্ধ" উল্লেখ করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। সবকিছু মিলিয়ে নারীর অধিকার ও আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো সামনে চলে আসায় রায়ের ক্ষেত্রে ধর্মীয় আবেগের চেয়ে নারীর ক্ষমতায়নের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোই প্রাধান্য পেয়েছে।