‘প্রশাসনিক মানববন্ধনে’ স্থবির জাবি

  • জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

জাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের কার্যক্রম।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত এ মানববন্ধন চলে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অফিস ঘুরে স্থবির অবস্থা দেখা যায়। সেবা প্রার্থী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অফিস থেকে সেবা না পেয়ে ফিরে আসতে দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস, ডেপুটি রেজিস্ট্রার অফিস, শিক্ষা শাখা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস, টিচিং শাখা, উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি শাখাসহ বিভিন্ন হলের অফিসসমূহ ঘুরে দেখা যায়, ডেস্কগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, সেখানেও নেই চিকিৎসক। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ফাঁকা পড়ে আছে বৃত্তি শাখা

 

বিজ্ঞাপন

এদিকে, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে অনেকে জানেন না মানববন্ধনের কারণ। ব্যানারে ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, মাননীয় উপাচার্য ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে’ মানববন্ধনের কথা বলা হলেও একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বিরোধীদের অবস্থানের কারণে তারা মানববন্ধনে এসেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম খালেদা জিয়া হলের এক কর্মচারী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন চাই। যারা এই উন্নয়নের বিরুদ্ধে, আমরা তাদের এই উন্নয়ন বিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদ জানানোর জন্যই আজ মানববন্ধনে এসেছি।’

অন্যদিকে, উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত রেখে মানববন্ধনে উপস্থিত হন।

মানববন্ধনের কারণে শিক্ষা শাখায় কেউ নেই

 

চিকিৎসা কেন্দ্রে জরুরি সেবা না পেয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রুবেল শেখ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘জরুরি সেবা নেওয়ার জন্য আমি মেডিকেল সেন্টারে যাই। কিন্তু গিয়ে দেখি কোনো ডাক্তার এবং নার্স সেখানে নেই। রুমগুলো সব ফাঁকা পড়ে আছে। পরে ফার্মেসিতে গিয়ে দেখলাম একজন আছেন তার কাছে শুনলাম ঘটনার বর্ণনা। তিনি বললেন, সবাই মানববন্ধনে গেছে। পরবর্তীতে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে কাউকে না পেয়ে জরুরি চিকিসৎসার জন্য ঢাকাতে চলে আসছি।’

এ বিষয়ে একাধিক চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখে মানববন্ধনে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন।

চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা শামছুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘অফিসার সমিতির আহ্বানে আমরা মানববন্ধনে গিয়েছি। তবে জরুরি সেবা তখন চালু ছিল। এছাড়া আমাদের নির্দেশনা ছিল জরুরি কোনো প্রয়োজন হলে চিকিৎসককে সেখানে যাওয়ার।’

কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ

 

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখে মানববন্ধনের আয়োজন করাকে ‘সরকারি হরতাল’ বলে মনে করছেন ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক।

তিনি বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমরা এমন দেখিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্থগিত করে মানববন্ধন করা হচ্ছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এভাবে কাজ করতে পারে না। আমাদের যৌক্তিক দাবির কাছে হেরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন এটা দুঃখজনক।’

অফিসসমূহ বন্ধ রেখে মানববন্ধনের আয়োজন করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘উপাচার্য ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের মানববন্ধন ছিল।’

তবে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার জানা নেই। জেনে দেখতে হবে।’