গেস্টরুমে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের কক্ষে তালা!

  • ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সূর্যসেন হলের ২২৬ নং কক্ষে তালা ঝুলিয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা

সূর্যসেন হলের ২২৬ নং কক্ষে তালা ঝুলিয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা

গেস্টরুমে উপস্থিত না হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে শিক্ষার্থীদের একটি কক্ষে তালা ঝুলানোর অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ২২৬ নং কক্ষে তালা ঝুলানো হয়।

বিজ্ঞাপন

খবর পেয়ে সাংবাদিকরা সরেজমিন পর্যবেক্ষণে গেলে তাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। সাংবাদিকদের সামনেই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলের ২০১-এর (ক) নং কক্ষে নিয়ে তাদের হুমকি দেওয়া হয়।

পরে সাংবাদিকরা সেখানে পৌঁছালে দ্বিতীয় বর্ষের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রেহমান সোহান, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের মশিউর রহমান ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। ‘নিউজ করবেন, করেন’ বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন গেস্টরুমে উপস্থিত না থাকায় তাদের কক্ষে তালা মেরে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, সকালে মিডটার্ম পরীক্ষা। রুমে তালা দেওয়ায় খুব সমস্যায় পড়ে যাই। পরে বিষয়টি আমরা এক ভাইয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানাই।

গেস্টরুমে না যাওয়ার কারণেই তালা ঝুলিয়েছেন স্বীকার করে মশিউর রহমান ঔদ্ধত্যপূর্ণ কণ্ঠে বলেন, “হ্যাঁ, বড় ভাইয়েরা তালা লাগাতেই পারে, কী হয়েছে? বড় ভাইদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বললেই তো আবার খুলে দেব। এভাবে আমাদের রুমেও অনেকবার তালা দেওয়া হয়েছে। আমরা তো কাউকে কিছু বলি নাই! হলে উঠছে অবৈধভাবে, এটুকু তো মানতেই হবে। না হলে হল থেকে বের হয়ে যাক, আমরাও আর তালা দেব না।”

“ওদের (প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা) এখনি মিনি গেস্টরুমে নেব। সবাইকে ডাক দে। নইলে হল থেকে বের করে দেব।” এ কথা বলে সাংবাদিকদের সামনেই হলের ২০১-এর (ক) নং কক্ষে নিয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ধমকাধমকি করেন ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারীরা।

এরপর ‘এ খবর সাংবাদিকদের কাছে কিভাবে গেছে?’ এমন প্রশ্ন করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মোবাইল চেক এবং নানাভাবে তাদের মানসিক নির্যাতন শুরু করেন মশিউর ও তার সঙ্গীরা।

ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও তার অনুসারী ইমরান সাগর


জানা যায়, আল নাহিয়ান খান জয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হওয়ার পর বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগের বরিশাল অঞ্চলের একটি গ্রুপ। যাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমরান সাগর নামে এক নেতা। তার নির্দেশেই দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী হলের কক্ষে তালা দিয়েছেন। অভিযোগ আছে প্রোগ্রামে না গেলে ইমরান সাগর নিজেও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের হুমকিধমকি দেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরান সাগর বলেন, “আমি বিষয়টি আপনাদের কাছেই শুনেছি। অতি উৎসাহী হয়ে কেউ এমন কাজ করলে আমরা ব্যবস্থা নেব। ছাত্রলীগ কাউকে বাধ্য করে প্রোগ্রাম করায় না।”

সাংবাদিকদের সামনেই ঘটনা ঘটেছে, এর চেয়ে বড় প্রমাণ কী চান? এমন প্রশ্নে ইমরান বলেন, “বরিশাল গ্রুপটা শুধু আমার না। এখানে আরও অনেক ক্যান্ডিডেট আছে। কেউ হয়তো ষড়যন্ত্র করছে। সে দায়ভার তো আর আমরা নিতে পারি না। তবে আপনাদের (সাংবাদিকদের) সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেব।”

এ ব্যাপারে জানতে সূর্যসেন হল সংসদের ভিপি মারিয়াম জামান খান সোহানকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছেন হল সংসদের জিএস সিয়াম রহমান।

তিনি বলেন, “আসলে সবকিছু চাইলেই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। যারা এমন একটি ঘটনা ঘটিয়েছে হল সংসদ তাদের বিরুদ্ধে প্রভোস্ট স্যারের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাবে। আমাদের হল সংসদ সব ধরনের গণরুম, গেস্টরুম কালচারের বিরুদ্ধে।”

রাত বেশি হওয়ায় হল প্রভোস্ট মকবুল হোসেন এবং ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে প্রটোকল দিতে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের চারটি কক্ষে তালা ঝুলিয়েছিলেন তার অনুসারীরা।