ছেঁড়া টাকা জনসম্মুখে ফেলে রাখার নিয়ম নেই

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছেঁড়া টাকা প্রসঙ্গে কথা বললেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ছেঁড়া টাকা প্রসঙ্গে কথা বললেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ছেঁড়া টাকা কিংবা টাকার টুকরো অংশ জনসম্মুখে ফেলার কোনো নিয়ম নেই। হয় পুড়িয়ে ফেলবে, নয়তো বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁতে ফেলবে। কিংবা এমন জায়গায় রাখবে যাতে সাধারণ মানুষ তা দেখতে না পায়।

কিন্তু মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বগুড়ার শাজাহানপুরে বিলের পাড়ে টুকরো টাকার স্তূপ দেখা গেছে। সেখান থেকে পুলিশ কয়েক বস্তা টাকা নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করেছে। দেশে প্রথমবারের মতোই জনসম্মুখে ছেঁড়া ও টুকরা টাকার কুচি কুচি অংশ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তবে এমন কাজ বাংলাদেশ ব্যাংক করেনি বলে দাবি করছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এদিকে বিষয়টিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বহীন কাণ্ড বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন।

তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'ছেঁড়া টাকা পুড়ে ফেলার নিয়ম রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ছেঁড়া টাকা কিংবা টুকরো অংশ ফ্রিজ করে রাখবে অথবা ব্যাংকের নির্ধারিত স্থানে পুতে ফেলবে।'

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'ছেঁড়া টাকা পুড়ে ফেলা কিংবা পুতে রাখার বিধান রয়েছে'।

কিন্তু টাকা পুড়লে না কি পরিবেশন নষ্ট হয়। পরিবেশবিদের দাবি, এখন টাকা কম পোড়ানো হচ্ছে। এগুলো আমাদের ব্যাংকের অধীনে রাখা হচ্ছে। গত দু-তিন বছর ধরে টাকার এই বর্জ্যগুলো ব্যাংকের রাখতে রাখতে জায়গা হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বগুড়া পৌরসভাকে ছেঁড়া টাকা বর্জ্য হিসেবে নিজস্ব ডাস্টবিনে রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব পালন করেনি। ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের চান্দাই গ্রাম সংলগ্ন খাউরা বিলের পাড়ে এবং পানিতে ছেঁড়া টাকাগুলো দেখতে পায় সাধারণ মানুষ। টাকা পড়ে থাকার খবর পেয়ে স্থানীয়রা ছাড়াও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।

এরপর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বগুড়ার শাজাহানপুরে বিলের পাড়ে জনসম্মুখে টুকরো টাকার স্তূপ ফেলে রাখার খবর প্রকাশ করা হয়।

এই টাকা নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে নানা ধরনের মুখরোচক আলোচনা চলতে থাকে। উৎসুক জনতার ভিড় নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাতিলযোগ্য এই টাকাগুলো দেখতে পায়। তারা নানা মন্তব্য করতে থাকেন।

চান্দাই গ্রামের সাবিনা, দুলাল, জালসুকা গ্রামের রমজান ও লিপু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, সোমবার সকাল থেকে তারা বিলের পানিতে এবং পাড়ে টুকরো টুকরো করা টাকা পড়ে থাকতে দেখেন। গ্রামের অনেকেই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য টাকার টুকরোগুলো বাড়িতে নিয়ে যান।

বিষয়টি শুনে শাজাহানপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। এ সময় শত শত গ্রামবাসী জড়ো হলেও কীভাবে টাকাগুলো সেখানে আসলো তা কেউ বলতে পারেন না। পরে শাজাহানপুর থানা পুলিশ নমুনা হিসেবে তিন বস্তা টাকা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এরই মধ্যে লোকমুখে জানা যায়, টাকাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বাতিল হওয়ায় তা মেশিন দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিলের পাড়ে টুকরো টাকার স্তূপ