জাবি উপাচার্যকে 'তিরস্কার' করলেন আন্দোলনকারীরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারীসহ নানা অভিযোগ তুলে 'তিরস্কার' করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর'র ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে জাবি উপাচার্যকে তিরস্কার জানানোর পাশাপাশি মানববন্ধনের আয়োজন করেন তারা।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে 'তিরস্কারনামা' পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক।
এ সময় তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপাচার্যের দুর্নীতি, অনিয়ম, মিথ্যাচার, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র ধারাবাহিকভাবে দেখে আসছি। এর মধ্যে রয়েছে ৫৪ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, ও রাতের আঁধারে নারী শিক্ষার্থীদেরকে পুলিশে দেওয়া। শিক্ষকদের অসম্মান করা, বেআইনিভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর চেষ্টা করা। এছাড়া ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল এক শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া এবং তার বিচার না করে উল্টো শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করা। এসব ঘটনার সঙ্গে উপাচার্য জড়িত।'
আরিফুল ইসলাম অনিক আরও বলেন, 'একনেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১৪৪৫ কোটি টাকা এসেছে সে টাকা থেকে দুই কোটি টাকা উপাচার্য ছাত্রলীগের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করেছেন। আমরা উপাচার্যের এই কাজের জন্য ধিক্কার জানাই। পদে পদে উপাচার্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার পদকে কলুষিত করেছেন। অনিয়ম, মিথ্যাচার, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে আমরা সর্বাত্মকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি ও ভর্তি পরীক্ষার সময় সকল ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। আমরা চাই, তিনি আগামী অক্টোবরের ১ তারিখের মধ্যেই পদত্যাগ করবেন।'
কর্মসূচিতে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবাসেন। সেই ভালবাসার জায়গা থেকে আশা করবো আগামী ১ অক্টোবরের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করবেন। আমরা এই তিরস্কারের মাধ্যমে আপনাকে পুরস্কৃত করতে চাই সেই সুযোগ আপনি দেবেন আশা করছি। আপনার বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করুন বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করুন।'
'দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর' ব্যানারের অন্যতম মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, 'উপাচার্যের পদত্যাগ চাওয়ার পরেও তিনি পদত্যাগ করেননি। আমরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি কিন্তু তিনি সেটা অমান্য করে পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলেন। আমরা আশা করব উপাচার্য তার সম্মান রেখে আগামী ১ তারিখের মধ্যে পদত্যাগ করবেন।'
এ সময় তিনি উপাচার্যের পদত্যাগ ও অবাঞ্ছিতের দাবিতে আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। যার মধ্যে রয়েছে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ এছাড়া 'অবাঞ্ছিত উপাচার্যকে' কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার, অধ্যাপক তারেক রেজা, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়া জাবি সাংস্কৃতিক জোট, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।