বিশ্বব্যাপী গতানুগতিক নির্বাচন পদ্ধতির বাহিরে গিয়ে অনুষ্ঠিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। এই নির্বাচনে চারটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয় দেশটির প্রেসিডেন্ট। যেখানে আছে ককাস, প্রাইমারি, পপুলার ভোট ও ইলেকটোরাল ভোট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে দলীয় টিকিট পেতে প্রাইমারি ও ককাসের মধ্য দিয়ে যেতে হয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান-সমর্থকেরা নির্ধারণ করেন কারা তাদের দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন।
প্রাইমারি হচ্ছে প্রথাগত নির্বাচন, যেখানে দিনব্যাপী গোপন ব্যালটে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। প্রাইমারিতে বিজয়ী প্রার্থী নিজ দলের ওই রাজ্যের প্রতিনিধিদের জাতীয় সম্মেলনে তার পক্ষে ভোট দিতে নিয়ে যান।
অন্যদিকে ককাস হচ্ছে দলের নিবন্ধিত ভোটার ও কর্মীদের সভা, যা পূর্বনির্ধারিত দিন ও ক্ষণে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী ইস্যু নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। পরে তারা ভোটের আয়োজন করে একজন প্রার্থী নির্বাচন করেন। কাউন্টি পর্যায়ের সম্মেলনে ওই প্রার্থীকে সমর্থন দিতে প্রতিনিধিও নির্বাচন করা হয়। কাউন্টি সম্মেলনে অঙ্গরাজ্যের সম্মেলনের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। আর অঙ্গরাজ্যের সম্মেলনে নির্বাচিত হন জাতীয় সম্মেলনের প্রতিনিধি।
অঙ্গরাজ্য ও দলভেদে প্রাইমারি ও ককাসের ভিন্নতা থাকলেও মূল লক্ষ্য একই। প্রার্থীর সমর্থন নির্ধারণ ও সাধারণ নির্বাচনের জন্য একজন প্রার্থী বাছাই করা।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের নাগরিকেরা সরাসরি যে ভোট দিয়ে থাকেন তাকেই পপুলার ভোট বলে। সে হিসেবে কোনো প্রার্থী একটি অঙ্গরাজ্যে সর্বাধিক ভোট পেলেই তাকে সেখানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনের দিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের নিবন্ধিত সকল ভোটার ভোট দিতে পারেন। বিদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকরা ডাকযোগে ভোট দিতে পারেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যেই নির্ধারিত দিনের আগেই ভোট হয়ে যায়। এরপরও যারা স্বশরীরে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে আগ্রহী তারা নির্ধারিত দিনে কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করেন।
কিন্তু মার্কিন নাগরিকদের ভোটে এগিয়ে থাকলেও কেউ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃত হবেন না। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ৩০ লাখের বেশি পপুলার ভোট পেলেও প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি।
তার আগে ২০০০ সালে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী আল গোরের কাছে সরাসরি ভোটে হেরে যাওয়ার পরও প্রেসিডেন্ট হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ।
বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের স্টিয়ারিং থাকে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটারদের হাতে। তারাই নির্ধারণ করেন হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা। আর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় কক্ষ মিলিয়ে রাজ্যটির যত প্রতিনিধি, সেটাই হলো তার ইলেকটরদের সংখ্যা।
দেশটিতে এই ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮টি। সব মিলিয়ে ৫০টি রাজ্যের ৪৩৫ জন প্রতিনিধি এবং সেই সঙ্গে ১০০ জন সিনেটর। এছাড়া ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার তিনজন ইলেকটোরাল থাকে।
রাজ্যভেদে ক্যালিফোর্নিয়া ৫৪টি, টেক্সাসে ৪০টি, ফ্লোরিডায় ৩০টি, নিউ ইয়র্কে ২৮টি, ইলিনয় ও পেনসিলভানিয়ায় ১৯টি করে ইলেকটোরাল ভোট আছে।
এছাড়া ওহাইওতে ১৭টি, জর্জিয়ায় ১৬টি, নর্থ ক্যারোলাইনায় ১৬টি, মিশিগানে ১৫টি, নিউ জার্সিতে ১৪টি, ভার্জিনিয়াতে ১৩টি, ওয়াশিংটনে ১২টি, আরিজোনা, টেনেসি, ম্যাসাচুসেটস ও ইন্ডিয়ানায় ১১টি করে, মিনেসোটা, উইসকনসিন, ম্যারিল্যান্ড, মিজৌরি ও কলোরাডোতে ১০টি করে, অ্যালবামা ও সাউথ ক্যারোলাইনায় ৯টি করে, কেন্টাকি, অরেগন ও লুইজিয়ানায় ৮টি করে, কনেটিকাট ও ওকলাহোমায় ৭টি করে, মিসিসিপি, আরকানস, ক্যানজাস, আইওয়া, নেভাডা ও ইউটায় ৬টি করে, নিউ মেক্সিকো ও নেব্রাস্কায় ৫টি করে, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ার, মেইন, রোড আইল্যান্ড, আইডাহো ও হাওয়াইতে ৪টি করে; মন্টেনা, নর্থ ডেকোটা, ভার্মন্ট, ডেলাওয়ার, ওয়াইওমিং, সাউথ ডেকোটা, আলাস্কা ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় ৩টি করে ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে।
ইলেকটোরাল ভোটের ক্ষেত্রে রয়েছে একটি বিতর্কিত পদ্ধতি। কোন রাজ্যের অর্ধেকের বেশি ইলেকটোরাল ভোট যে প্রার্থী পাবে সেই রাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট বিজয়ী প্রার্থীকে দিয়ে দেওয়া হবে। যেমন, ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৪টি ইলেকটোরাল ভোট আছে। এখান থেকে ট্রাম্প অথবা কমলার দুজনের অথবা অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে যে জিতবে সে সবগুলো ভোট পাবে। বিজয়ী প্রার্থী যদি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ২৯টি ইলেকটোরাল ভোটও পায় তাহলে ৫৪টি ভোটই বিজয়ী প্রার্থীর বলে গণ্য হবে। এই পদ্ধতিটি ‘উইনার-টেইক-অল’ পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত।
এক্ষেত্রে সুইং স্টেটগুলোর পাশাপাশি ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও নিউ ইয়র্কের ইলেকটোরাল ভোটও নির্ধারণ করে দিতে পারে ট্রাম্প-কমলার ভাগ্য।