থাইল্যান্ডের বিচ পরিচ্ছন্ন থাকে যেভাবে
থাইল্যান্ড থেকে ফিরে: বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত কয়েকবার ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। দেখেছি সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, ছেঁড়াদ্বীপসহ কয়েকটি দ্বীপ।
বাংলাদেশের সব বিচগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অপরিচ্ছন্ন। সমুদ্র থেকে ভেসে আসা ময়লা, আবর্জনা, মরা শামুক, ঝিনুক বিচগুলোর সৌন্দর্য ম্লান করে দেয়। বিচে খালিপায়ে হাঁটার কোন উপায় নেয়। সারাক্ষণই থাকে মরা শামুক ঝিনুকে পা কাটার আশঙ্কা।
সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে বিচগুলোর এ দৈন্যদশা পর্যটক আকর্ষণের পথে অন্তরায় হয়ে আছে।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের হয়ে দু’বার থাইল্যান্ড ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। থাইল্যান্ডে গিয়ে পাতায়া, ফুকেট ব্যাংকক ও তার আশে পাশের দ্বীপ ও বিচগুলো দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।
তাদের দ্বীপ ও বিচগুলো কি পরিচ্ছন্ন! সমুদ্র থেকে ভেসে আসা আবর্জনা, ময়লাতো দূরের কথা একটি মরা ঝিনুকও কোথাও পড়ে থাকতে দেখা যায় না। পর্যটকরা সবসময় নির্বিঘ্নে বিচে হেঁটে বেড়ান। থাকে না পা কাটার কোন আশঙ্কা।
কিন্তু তাদের বিচগুলো কীভাবে এত পরিচ্ছন্ন থাকে! তাদের ছোট ছোট বিচগুলোতে পর্যটকের অভাব নেই। কিন্তু কোন ময়লা আবর্জনা নেই।
হোটেল রিসিপশন কথা বলে জানতে পারলাম, তারা সরকারের ছোট ছোট নির্দেশনা পালন করে থাকেন। নির্দেশনা অনুযায়ী তারা শহর ও বিচ পরিষ্কার রাখেন। তেমনি এখানে যখন কোন পর্যটক আসেন তারাও শহরের পরিচ্ছন্নতা দেখে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলেন না।
তার কাছ থেকে আরও জানতে পারলাম। খুব সকালেই পরিচ্ছন্ন কর্মীরা গোটা বিচ পরিষ্কার করেন। প্লাস্টিক পানির বোতল জাতীয় আবর্জনা সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসে না আসলেও কিছু মরা ডালপালা শামুক ঝিনুকের মতো আবর্জনা সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে ভেসে বিচের সৌন্দর্য নষ্ট করে।
পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম দেখতে আমি ও আমার সহকর্মী বার্তাটোয়েন্টিফোরের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সেরাজুল ইসলাম সিরাজ খুব ভোরে ফুকেটের পাতং বিচে উপস্থিত হয়।
পাতং বিচটি খুব বড় নয়। এক কিলোমিটারের কিছু বেশী হতে পারে। খুব সকালে সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, মাত্র দু’জন পরিচ্ছন্ন কর্মী বিচটি পরিষ্কার করছেন। দুই পরিচ্ছন্ন কর্মীর একজন অল্প বয়সী ছেলে একজন মাঝবয়সী মহিলা।
তারা খুব যত্নের সাথে বিচটি পরিষ্কার করছেন। খেয়াল করে করে দেখছেন কোথাও কোন ময়লা রয়ে গেল কিনা। চোখে পড়া মাত্রই সেটি কুড়িয়ে এনে কালো রংয়ের পলিথিন ব্যাগে ভরে ফেলছেন। পলিথিন ব্যাগটি ভরে গেলে সুতা দিয়ে মুখ আটকিয়ে দিচ্ছেন, যাতে করে এটি পরিবহনের সময় কোন আবর্জনা রাস্তায় না পড়ে। বিচে চলাচলের উপযোগী একটি গাড়ি এসে পলিথিনের বস্তাগুলো সংগ্রহ করে পাশ্ববর্তী ময়লা রাখার স্থানে রেখে আসে।
বিচে পর্যটক সমাগমের আগেই তারা কাজটি করছেন। ফলে পর্যটকগণ সবসময়ই বিচ পরিচ্ছন্ন দেখতে পান।
বাংলাদেশে কোন ডাস্টবিনের পাশ দিয়ে দুর্গন্ধের জন্য হাঁটা যায় না। ময়লার গাড়ি পাশ দিয়ে গেলে দুর্গন্ধে টেকা যায় না। ময়লা নিয়ে গাড়িগুলো গন্তব্যে যাওয়ার আগেই এক চতুর্থাংশ ময়লা রাস্তায় পড়ে পরিবেশ নষ্ট করে। কিন্তু থাইল্যান্ডের ময়লা রাখার স্থান বা ডাস্টবিনের পাশ দিয়ে হাঁটলে কোন দুর্গন্ধ পাওয়া যায় না। কেননা তারা বাসাবাড়ি, হোটেল কিংবা দোকানপাট থেকে ময়লা পলিথিন ব্যাগে ভরে মুখ আটকিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে যায়। ময়লা ফেলার ডাস্টবিনগুলোতেই পলিথিন ব্যাগ দেওয়া থাকে। প্রতিদিন সকালে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ব্যাগগুলো নিয়ে নতুন ব্যাগ লাগিয়ে যায়।
বাংলাদেশেও এমন ব্যবস্থা চালু করা তেমন কঠিন কাজ নয়। শুধু সিটি করপোরেশনগুলের আন্তরিকতা ও আমাদের আইন মানার ইচ্ছাই যথেষ্ট।