রমজান আসতেই চড়া কাঁচাবাজার
পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে বাজার তদারকিসহ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে এর তেমন প্রভাব পড়েনি বাজারে। এদিকে দরজায় কড়া নাড়ছে রমজান। আর এরই মধ্যে রোজাকে সামনে রেখে চড়া কাঁচাবাজার।
সোমবার (৬ মে ) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজি প্রকার ভেদে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেড়েছে। তবে স্থিতিশীল রয়েছে চাল ও মাছের বাজার। বেড়েছে মুরগির দাম।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী রুবেল বার্তা২৪.কমকে জানান, রমজানকে সামনে রেখে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে আবহাওয়া খারাপ থাকায় বাজারে সবজি আসছে না। তাই সবজির সরবরাহ কম থাকায় এবং চাহিদার কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে।
সবজি বাজারের বর্তমান বাজার দরে প্রতি কেজি বেগুন ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কলা ৩০ টাকা হালি, চাল কুমড়া ৫০ টাকা কেজি, ঝিঙা ৫৫ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, ক্যাপসিকাম ৩৫০ টাকা, লেটুস পাতা ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও সজনে ডাঁটা ৬০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৬০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ২৫ টাকা, আলু ২২ টাকা, রসুন ১২০ টাকা, আদা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রমজানে ইফতারের জন্য যেসব উপকরণ লাগে সেগুলোর দাম বেড়েছে। বাজারের বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী প্রতি কেজি চিনি ৬০ টাকা, ছোলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বেসন ৭০ টাকা, আটা ৬০ টাকা, প্রতি ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ৪৯০ থেকে ৫০০ টাকা, গুড় ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানদার বাসার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা বেশি দামে কিনেছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। রমজান উপলক্ষে দাম বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের কোনো হাত নেই।’
বাজার করতে আসা শাহিনা আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘রোজার আর মাত্র একদিন বাকি। তার আগেই প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষদের জন্য এ বাড়তি দাম অনেকটাই কষ্টকর।’
অন্যদিকে মাছ ও চালের বাজারে স্থিতিশীলতা দেখা গেছে। সর্বশেষ খুচরা বাজারের তথ্য অনুযায়ী, রুই মাছের কেজি ৩০০ টাকা, পাঙাশ ১৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ টাকা, বোয়াল ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ মাছ বড় আকারের হালি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের সর্বশেষ খুচরা বাজারের তথ্য অনুযায়ী প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৫২ টাকা, ২৮-চাল ৪০ টাকা, পারি চাল ৩৮ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৬০ টাকা, কাটারি ভোগ ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে চিনিগুঁড়া চালের দাম কিছুটা বেড়ে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগি ব্যবসায়ী সোহেল বার্তা২৪.কমকে জানান, বাজারে মুরগি কম আসছে। তাই তিনদিনের ব্যবধানে সব ধরনের মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, কক মুরগি ২২০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ২৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাংসের মধ্যে গরু ৫৫০ টাকা এবং খাসি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা আবু নাছের বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘রমজান আসলেই সব কিছুর দাম বেড়ে যায়। সরকারও বলতে থাকে আমরা বাজার মনিটরিং করছি। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা তার কোনো সুফল পায় না।’
এদিকে সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ও চাঁদাবাজি বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তবে বাজার ঘুরে তার বিপরীত চিত্র দেখা গেছে।
বাজারে পণ্যের বাড়তি দামের বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি মনে করি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের দায়িত্ব। তাই সরকারের উচিত রমজানের আগে বাজারকে স্থিতিশীল রাখা।’