রমজানের প্রথম দিনই অস্থির রাজধানীর কাঁচাবাজার
প্রথম রোজা পালন করছে বাংলাদেশের মুসলমানরা। বিগত কয়েকদিন ধরেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তি ছিল। কিন্তু রোজা শুরুর প্রথম দিনই যেন আরও অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো।
মঙ্গলবার (৭ মে) সকালে রাজধানীর টাউন হল, কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব পণ্যের দামই বাড়তি।
রাজধানীর টাউন হলসহ অন্যন্য বাজারে রোজার প্রথম দিন কেজি প্রতি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। যা এক দিন আগে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। যা আগের দিন ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
এদিকে, কাঁচা পেঁপে ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, গাঁজর ৫০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০ টাকা পিস, লাউ ৪০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ২৮ টাকা, আদা ১১০ টাকা, রসুন ১১০ টাকা, আলু ১৯ থেকে ২২ টাকা ও ক্যাপসিকাম ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
টাউনহলের ব্যবসায়ী মামুন বার্তা২৪.কমকে বলেন, পাইকারি বাজার থেকে আমরা বেশি দামে পণ্য কিনি। তাই দাম না বাড়িয়ে উপায় থাকে না। আমরা যে দামে কিনি, তার চেয়ে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেশিতে বিক্রি করি। কারণ, এখানে তো আমাদের লাভের বিষয় আছে।
এদিকে, রোজার প্রথম দিন হওয়ায় ইফতারের জন্য চাহিদা ও সরবরাহ বেড়েছে সব ধরনের ফলের। কারওয়ান বাজারের ফলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফলের যথেষ্ট সরবরাহ আছে, তবে দাম খানিকটা বেশি বলছেন ক্রেতারা।
বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি পেয়ারা ১০০ থেকে ১১০ টাকা, পাকা পেঁপে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, বেল ৭০ টাকা, কাঁচা আম ৬০ টাকা, তরমুজ ৭০ থেকে ১০০ টাকা, বাংগি ৮০ থেকে ১২০ টাকা, আনারস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ডাব ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আপেল ২০০ টাকা, বেদানা ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, আঙুর সাদাটা ৩০০, লালটা ৪৫০ টাকা, মালটা ১৬০ টাকা এবং খেজুর মান ভেদে ২৫০ থেকে ১৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সাগর কলা ১০০ টাকা ডজন, চম্পা কলা ৬০ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে।
ফল কিনতে আসা আলাউদ্দিন আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ইফতারের জন্য ফল তো লাগেই। দু’দিন আগেও ফল কিনেছিলাম, তখন দাম কিছুটা কম ছিল। তবে আজ রোজার প্রথম দিনে এসে দেখি, সব ফলের দাম বেড়ে গেছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর সব বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল আছে। এদিকে, বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পোলাওয়ের চালের দাম কিছুটা বেড়ে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর চালের দাম বাড়েনি দেখে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ক্রেতা সেলিনা পারভীন।
হাতিরপুলের মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, কিছুটা দাম বেড়ে ফার্মের মুরগি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, পাকিস্তানি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কক মুরগি ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত দামেই গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে এই মাংসের বাজারে।
হাতিরপুলের মুরগির ব্যবসায়ী সেলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, দেশি মুরগিসহ সব মুরগি একেবারেই কম আসছে। এজন্য দামটা বেড়েছে। তবে রোজা উপলক্ষে মুরগির দাম বাড়ার কথা অস্বীকার করেন এই ব্যবসায়ী।
এদিকে, মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবকিছুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাছের দাম খানিকটা বেড়েছে। মাছ ব্যবসায়ী রহমান শেখ জানান, রোজার সময় চাহিদা বেশি থাকায় দামও কিছুটা বেশি।
হাতিরপুলে প্রথম রোজায় প্রতি কেজি পাবদা ৫০০ টাকা, টেংরা ৫০০ টাকা, বেলে মাছ ৫০০ টাকা, ছোট পুঁটি ৪০০ টাকা, গুঁড়া মাছ ৩৫০ টাকা, বাটা মাছ ১৫০ টাকা, তেলাপিয়া মাছ ১৬০ টাকা, রুই মাছ ২২০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ কিনতে আসা মাসুদ মিয়া বার্তা২৪. কমকে বলেন, ছোট মাছ কেনার জন্য এসেছি বাজারে। তবে মাছের দাম অনেক বেশি। গত সপ্তাহে আমি পাবদা মাছ কিনেছিলাম সাড়ে ৩০০ টাকা কেজি। আজ দেখি ৫০০ টাকা।
এদিকে, মুদি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজার ভেদে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে ছোলা, চিনি, তেল, আটা, ময়দা, বেসন, মুড়ি, চিঁড়া, গুড়, আটাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম।
ক্রেতা শামসুন নাহার বার্তা২৪.কমকে বলেন, রোজাকে কেন্দ্র করে প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। সরকারের সঠিক নজরদারি থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকতো।
রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা যায়, রোজাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সব বাজারে পণ্যের দাম সমান নয়। বাজার ভেদে দামেরও বেশ তারতম্য রয়েছে। কারওয়ান বাজারে যে পণ্যের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা, হাতিরপুল বা টাউনহল বাজারে সেটি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়।